উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরার ১২তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ড. মানিক সাহা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসলেন। বুধবার আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সত্যাদেও নারায়ণ আর্য।
মঙ্গলবারই আগরতলায় বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্রের উপস্থিতিতে মানিককে বিধান পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। যদিও মানিক সাহার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন কেন্দ্রীয় ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। সদ্য বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যটির ধানপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন প্রতিমা। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিপিআইএম নেতা মানিক সরকারকে পরাজিত করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন প্রতিমা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রতিমার চেয়ে মানিকের উপরই বেশি ভরসা রেখেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন মানিক সাহা। এরপর থেকে মাঠ পর্যায়ে দলের হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে। ২০২০ সালে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি হন তিনি। ২০২২ এর মার্চ মাসে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন মানিক। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিধানসভার নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই ২০২২ সালের মে মাসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয় মানিক সাহাকে। সে সময় রাজ্যটির বরদোয়ালি টাউন কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জয়লাভ করে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন। এবারের নির্বাচনে সেই আসনটিই নিজের দখলে রাখলেন পেশায় দন্ত চিকিৎসক ৬৯ বছর বয়সী মানিক সাহা।
মানিক সাহা ছাড়াও এদিন ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রতন লাল নাথ, প্রণজিত সিংহ রায়, সুশান্ত চৌধুরী, সান্তনা চাকমা, টিংকু রায়, বিকাশ দেববর্মা , সুধাংশু দাস, শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া।
এদিন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডা প্রমুখ।
এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে গেলেও উত্তর পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা কিছুতেই থামছে না। আর এই কারণ দেখে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে সিপিআইএম ও কংগ্রেস।
গোটা রাজ্যে সহিংসতায় এখনো পর্যন্ত প্রায় ৮ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিন-দুপুরে ত্রিপুরার উদয়পুর রাজনগর এলাকায় বোমা বিস্ফোরনে গুরুতর আহত হয় এক নারী। আচমকাই ৪৫ বছর বয়সী পারুল বালা দাস নামে ওই নারীর সামনে বোমা ফাটে। ঘটনাস্থলে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন নারী। তাকে উদ্ধার করে গোমতী জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ জনকে আটক করেছে রাজ্য পুলিশ।
উল্লেখ্য ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩২টি আসন (প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৯ শতাংশ) পায়, তাদের শরিক দল 'ইন্ডিজিনাস পিপল ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা' (আইপিএফটি) ১টি আসনে জয়লাভ করে।
অন্যদিকে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৩টি আসনে (২০ শতাংশ ভোট) জয়লাভ করে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে করে টিপ্রা মোথা, সিপিআইএম ১১টি (২৪ শতাংশ ভোট), কংগ্রেস ৩টি আসনে (৮.৫৬ শতাংশ ভোট) জয় পায়।
বিডি প্রতিদিন/এএ