২৭ মে, ২০২৩ ২০:৩২

বিজেপিকে নিশানা, এবার সব ধরনের খেলাই হবে : মমতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বিজেপিকে নিশানা, এবার সব ধরনের খেলাই হবে : মমতা

মমতা ব্যানার্জি

২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসজুড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘খেলা হবে’ স্লোগানই হয়ে উঠছিল ক্ষমতাসীন দল তণমূল কংগ্রেসের প্রধান হাতিয়ার। প্রচারণায় বের হয়ে মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে বাম পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওই অবস্থায় প্রচারণায় দেখা দিয়েছিল মমতাকে। 

সেসময় তাকে বলতে শোনা যায় ‘ভাঙা পায়েই খেলা হবে’। এরপর ওই বছরের মে মাসে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে তৃণমূল। কার্যত সেই সময় থেকেই তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতা-নেত্রী, কর্মী-সমর্থকদের মুখেই এই ‘খেলা হবে’ স্লোগান শোনা যেত। বিরোধী দল বিজেপির কিছু নেতাদের মুখেও পাল্টা ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল। এই স্লোগান এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে প্রতিবছর ১৬ আগস্ট রাজ্যে খেলা দিবসের ঘোষণা দেন মমতা।

কিন্তু এরপর সেভাবে নির্বাচন না থাকায় এই স্লোগান আর ওভাবে শোনা যায়নি। কিন্তু সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের আগেই দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ফের এই স্লোগান দিতে দেখা গেল।

শনিবার ঝাড়গ্রাম জেলার শালবনিতে গিয়ে তৃনমূলের নব জোয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল ‘খেলা তো হবেই। আরো বেশি করে খেলা হবে। আগেরবার ফুটবল হয়েছে। এবার ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলা হবে। তীরন্দাজও হবে। সব রকমের খেলা হবে। আদিবাসী ড্যান্সও হবে।’

তবে শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচনই নয়, বছর ঘুরলেই ২০২৪ সালে দেশটিতে লোকসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলীয় কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান।

মমতা বলেন, ‘পঞ্চায়েত ছোট, বড় নির্বাচন তো বসে আছে। পঞ্চায়েত শক্তিশালী হলে তবেই তো বড়টাকে ধাক্কা দিতে পারবেন। তাই আপনারা নিজেদের মধ্যে কোন্দল বন্ধ করুন।’ 

‘তৃণমূল যদি ঝগড়া না করে তবে তৃণমূলকে হটানোর ক্ষমতা কারো নেই। তমূলের নিজেদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া থাকে তবে তৃণমূল দিল্লিকে লড়ে নেবে। তাছাড়া বিজেপিকে উৎখাত করতে গেলে মগজ থেকে রাজনীতি করতে হবে।’

দিল্লির বিজেপি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু চোখ রাঙানি সহ্য করতে পারি না। আমাকে রুখে দেওয়া খুব মুশকিল। যতদিন বাঁচবো, বীরের মতো লড়াই করবো। আমাকে গর্জালে আমি বর্ষাব। মনে রাখবেন দিল্লি আমাকে অনেক ধমক দেয়, চমকও দেয়। আমি বলি আর তো মাত্র ৬ মাস। আর ৬ মাস একটু কষ্ট সহ্য করুন। তারপর দিল্লি বদলাবে, আর দিল্লি বদলালে মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া অধিকার আমরা ফিরিয়ে দেব।’

এ দিনের সভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করে তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাধানোর অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘মনিপুরে যেমন গোষ্ঠী সংঘর্ষ লাগিয়েছে, ঠিক সেভাবে বাংলাতেও লাগাতে চায়। বিজেপি চেয়েছিল পাহাড় (দার্জিলিং) আলাদা করে দাও। কিন্তু আমি কোনোরকমে সামলেছি। এবার তাদের লক্ষ্য কুড়মি সম্প্রদায় এবং আদিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেওয়া। এরপর সেই তার দোহাই দিয়ে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনা হবে এবং দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা করতে পারবে না।’

শুক্রবার রাতে শালবনীতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি এবং রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িবহরে হামলার তীব্র নিন্দা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার অভিযোগ এই হামলার পেছনে বিজেপির হাত ছিল।

কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ইতিহাস বদলানোর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল প্রধান। তিনি বলেন, ‘বিজেপি এমনিতে পারবে না। তাই রোজ ইতিহাস বদল করছে, চরিত্র বদল করছে। শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম, নোট বদল করছে। বদলাতে বদলাতে একদিন নিজেদেরই বদল হয়ে যাবে।’

বিজেপিকে বিষধর সাপের সাথে তুলনা করে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘কোনো কেউটে সাপ কামড়াতে এলে পাল্টা তাকে কামরাতে যাবেন না। লাঠি দিয়ে তাড়াবেন। গাদ্দারের সঙ্গে যাবেন না। প্ররোচনায় পা দেবেন না।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর