শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আইনি জটিলতা

মায়ের লাশ নিয়ে সীমান্তে আটকে বাংলাদেশি যুবক

কলকাতা প্রতিনিধি

আইনি জটিলতায় মায়ের লাশ আগলে রেখে ভারতের সীমান্তে কাটাতে হচ্ছে এক বাংলাদেশি যুবককে। মায়ের মৃত্যুর পর চার দিন কেটে গেলেও এখনো লাশ দেশে নিয়ে আসার বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে পারেননি বাংলাদেশের দিনাজপুরের বাসিন্দা টোকন চন্দ্র সরকার।

মা কনিকা রানী সরকারের ( ৫৫) চিকিৎসা করাতে ১০ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন টোকন। মাকে নিয়ে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় মাসির বাড়িতে। কিন্তু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কনিকা সরকার। এরপর আত্মীয়ের পরামর্শে ১২ ফেব্রুয়ারি মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কনিকা রানীকে। কিন্তু ভর্তি করানোর সময় হাসপাতালের রেজিস্টারে বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ না করে সেখানে মালদার আত্মীয়ের ঠিকানা উল্লেখ করেন তিনি। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে মারা যান কনিকা রানী। মায়ের মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেটও ইস্যু করা হয় কনিকা রানীর নামে। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর সার্টিফিকেটে ভারতের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি হিলি সীমান্ত দিয়ে মায়ের লাশ নিয়ে দেশে ফিরে যেতেই গভীর সমস্যায় পড়েন টোকন। ভারতীয় কাস্টমস দফতরের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাকে। এর পর থেকেই মায়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরতে থাকেন টোকন। কিন্তু কোনো উপায় বের না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় সীমান্ত-সংলগ্ন গ্রামেই বাক্সের মধ্যে কাঠের গুঁড়ো, বরফ দিয়ে মায়ের লাশ সংরক্ষণের প্রাথমিক ব্যবস্থা করেন টোকন। এরই মধ্যে চলতে থাকে মায়ের লাশ দেশে নেওয়ার চেষ্টা। শেষে সংবাদ মাধ্যম ও শীর্ষস্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলাশাসক সঞ্জয় বসুর দ্বারস্থ হন টোকন। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন ও মালদা জেলা হাসপাতালের সঙ্গে। জেলাশাসকের তরফে ওই পরিবারকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি লাশের পচন ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের তরফে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালদা জেলা হাসপাতাল থেকে সংশোধিত নতুন ডেথ সার্টিফিকেট ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি আনতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। টোকেন সরকার বলেন, ‘১৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা নাগাদ মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর মৃত্যুর সার্টিফিকেটও নিয়ে আসি। কিন্তু মাকে নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার সময়ই ভারতীয় কাস্টমস বলে ঠিকানায় ভুল আছে, নতুন করে সার্টিফিকেট আনতে হবে। এর মধ্যে লাশে পচন ধরেছে। এখন কী করে মাকে দেশে নিয়ে যাব বুঝতে পারছি না। আমি স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করেছি। বাংলাদেশ হাইকমিশনকেও আরজি জানাচ্ছি তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে।’

সর্বশেষ খবর