‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের সুদিন আবার সগৌরবে ফিরে আসছে। দেশীয় বাজার বিকাশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পাটের চাহিদা বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও তত্পরতায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বহুমুখী ব্যবহার ও নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার আশা জাগিয়ে তুলছে পাট। দেশের পাট গবেষকদের প্রচেষ্টায় পাটের আঁশ থেকে মিহি ও উন্নতমানের সুতা উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে। পাট থেকে মিহি সুতা পাওয়া গেলে তা হবে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বড় চমক। পাটের সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় পাট দিবস। প্রতিপাদ্য বিষয় : ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহারে পাটের পুনরুজ্জীবন এবং আধুনিকায়নের সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবিষ্ট তদারকিতে বাংলাদেশে পাটের গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়। প্রয়াত জিন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জিনগত গঠন আবিষ্কারের ঘোষণা জাতীয় সংসদে দেন প্রধানমন্ত্রী। এই গবেষণার পথ ধরেই দেশের পাট গবেষকরা পাটের আঁশ থেকে অতি মিহি সুতা তৈরির প্রক্রিয়ায় সফলতা পেয়েছেন। এখন আঁশকে সূক্ষ্ম সুতায় পরিণত করার শেষ ধাপে রয়েছেন তারা। এই গবেষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাওয়া গেছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সুতা ও কাপড় আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে এবং বিশ্ববাজারে পোশাক খাতের সাশ্রয়ী উৎপাদনে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। গত বছরের ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাট আইন বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত অনুুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী নিজেও পাটের শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে আসেন। আজ দেশে প্রথমবারের মতো পাট দিবস পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশে-বিদেশে আট দিনের জমকালো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংশ্লিষ্টদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং পাটমেলা উদ্বোধন করবেন। রাজধানীসহ দেশের সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে পাটচাষিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। বিদেশেও বাংলাদেশ মিশনে পাটপণ্যের প্রদর্শনী হচ্ছে। অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাটের সম্ভাবনা বিকাশের উদ্দেশ্যে পাটচাষি, শ্রমিক উদ্যোক্তা, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা এবং কার্যক্রমের সমন্বয় বাড়ানোই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। এদিকে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে গবেষণা জোরালো করছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে পাটের আঁশ থেকে তৈরি পোশাকের উপযোগী সুতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাত-দিন গবেষণা চলছে। তাদের আবিষ্কারের ফলে এরই মধ্যে ডেনিম উৎপাদনে এখন দেশি পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগে থেকেই সুতামিশ্রিত কাপড় তৈরিসহ অন্যান্য কাপড় উৎপাদনে পাটকে কাজে লাগানো হচ্ছে। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবিষ্কার করা পাটের পাতার চা এখন রপ্তানি হচ্ছে। পাটকাঠি থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন বা চারকোল। পাটগাছের মূল দিয়ে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। অত্যাধুনিক জেট বিমান থেকে সাধারণ খেলনাসহ প্রায় সব পণ্যেই এখন বিভিন্নভাবে পাটের ব্যবহার হচ্ছে। প্রচলিত ব্যবহারের পাশাপাশি বহুমুখী ব্যবহারের ফলে পুনরুদ্ধার হচ্ছে রপ্তানি বাজার। দেশব্যাপী পাটের আবাদ, উৎপাদন ও দাম বেড়েছে। দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার পাটের চট বা জিও টেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি হয়েছে। মাটির ক্ষয় রোধে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, রেল, সড়কসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, আমাদের নিরলস চেষ্টার ফলে পাটের অর্থকরী মূল্য এমন হতে চলেছে যে কৃষকরা রাত জেগে খেত পাহারা দিতে বাধ্য হবেন। পাট এখন আর শুধু কৃষিপণ্য নয়। এটি বড় অঙ্কের মূল্য সংযোজনকারী শিল্পও। যে কোনো মূল্যে পাটের সোনালি সুুদিন ফেরানো হবেই। জানা গেছে, ২০১৫ সালের শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ধান, চাল, গম, ভুট্টাসহ ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে উদ্যোগ নেয়। এই প্যাকেজিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বেড়ে যায়। প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সারা দেশ ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আইনটি কার্যকর করতে ভূমিকা রাখেন। এরপর গত জানুয়ারিতে আরও ১১টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। নতুন পণ্যের মধ্যে রয়েছে— আলু, আটা, ময়দা, ডাল, হলুদ, মরিচ, পিয়াজ, আদা, রসুন, ধনিয়া, তুষ-কুড়া। এ আইন পুরোপুরি কার্যকর হলে পাটের উৎপাদন আরও বাড়বে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর পাটই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। তখন রপ্তানি আয়ের ৮৯ শতাংশই আসত পাট থেকে। পরে প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের প্রতাপে বাজার হারায় পাট পণ্য। গত কয়েক বছরে সেটি আবার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ১১৮ দেশে বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্তত ১০টি দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ। আগামী বছর থেকে ইইউর ২৮টি দেশেই পলিথিন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ফলে বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা ক্রমশ বাড়বে। এই সুযোগটি বাংলাদেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৭ পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার আরও বিকশিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাট খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। অর্থনীতিতে পাটকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পাটনীতি করা হয়েছে। পাটপণ্যকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রপ্তানিতে প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে পাটের নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
শিরোনাম
- ওষুধের আগ্রাসী বিপণনে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন
- রোনালদোকে ছাড়াই আল-নাসরের গোল উৎসব
- আজ ঢাকার বাতাসের মান কেমন?
- অস্ট্রেলিয়া সিরিজে নেই স্যান্টনার, দায়িত্বে ব্রেসওয়েল
- নতুন অ্যালবামে প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে অর্থহীন
- শেষ মুহূর্তের নাটকীয় গোলে অ্যাতলেটিকোকে হারাল লিভারপুল
- কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন
- রাজধানীতে বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বৃদ্ধ নিহত
- রাজধানী ঢাকায় আজ যেসব কর্মসূচি
- যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
- আমিরাতকে হারিয়ে শেষ চারে ভারতের সঙ্গী পাকিস্তান
- গাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা ইসরায়েলের
- গাজাবাসীকে ফের জোরপূর্বক উচ্ছেদের নিন্দায় পোপ
- স্বর্ণের দাম কমেছে
- ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের
- ছাত্র সংসদ আর জাতীয় নির্বাচন এক নয় : টুকু
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ করলো কলম্বিয়া
- রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
- বিশ্ব বাণিজ্যে রূপান্তর ঘটাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা
- আবারও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
ফিরে আসছে পাটের সুদিন
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর