বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বুঝেশুনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুন

—প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে বুঝেশুনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘আমি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বলব, যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে বিনিয়োগ করুন। বিনিয়োগ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা আমরা চাই না।’ গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রজতজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সাত দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. মো. খায়রুল হোসেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির পদস্থ কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যাবলি নিয়ে একটি ভিজুয়াল প্রেজেনটেশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপন হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালুকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর পছন্দের বাসকেট (ঝুলি) সম্প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করা, নতুন প্রোডাক্ট চালু করার আগে এর পরিচিতি, পরিচালন প্রক্রিয়া ও কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিতকরণ এবং বিএসইসির প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম জোরদার করে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তৃতকরণ। সেই সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা ও গুরুত্ব, অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে পুঁজিবাজারের আন্তসম্পর্ক বিষয়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানির শেয়ার লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্মল ক্যাপ বোর্ড চালু করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের অগ্রগতির ধারা আরও বেগবান হবে। পাশাপাশি কমিশন নিয়ন্ত্রক ও সহায়তাকারী উভয় ভূমিকায় পুঁজিবাজার বিকাশে যে ধারা বজায় রেখেছে তা অব্যাহত রাখবে এবং গতিশীল করবে। পুঁজিবাজারের বিকাশে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে আমরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করা, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়ন, শেয়ারবাজারে লেনদেনে কারচুপি-অনিয়ম শনাক্তকরণ ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত প্রণোদনা প্যাকেজের সফল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। ফলে পুঁজিবাজার আজকের স্থিতিশীল অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দ্রুত বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’ তার সরকার ভবিষ্যতেও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার হবে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের এক নির্ভরযোগ্য উৎস। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০৪৩ সালে যখন বিএসইসির সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে, অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে পুঁজিবাজারের অবস্থান আরও বলিষ্ঠ হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে এবং বিএসইসি পেয়েছে “এ” ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মান। বেড়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আমাদের বাজারের প্রতি ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবিআই) এবং বিএসইসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়াম ইতিমধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ অন্তর্ভুক্তিতে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার আদর্শকে অনুসরণ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করি। যখনই সরকার গঠন করেছি, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। আমাদের লক্ষ্যই হলো দেশের সার্বিক উন্নয়ন।’ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং বিশ্বের কাছে পুঁজিবাজারের অবস্থান সমুন্নত হয়েছে। এই অগ্রগতি কোনোভাবে ব্যাহত করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী দুই বছরের জন্য চলমান পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে এবং সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশে সত্যিকারের পুঁজিবাজার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং আমরা এ জন্য গর্ব অনুভব করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর