বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
অপেক্ষার ১৪ বছর

যেভাবে এগোলো মামলা

আহমেদ আল আমীন

আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর কেটে গেছে ১৪ বছর। মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্য গ্রহণে ব্যয় হয়েছে একটি উল্লেখযোগ্য সময়। সব প্রক্রিয়া শেষে বহুল আলোচিত এ মামলার বিচারে এক যুগেরও বেশি সময় লেগেছে। বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম দৃষ্টান্ত এ মামলাটি। এ মামলার কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ  করে কয়েকবার উচ্চ আদালতে যাওয়ায় আদালতের ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জনের প্রাণহানিসহ অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। সেটি পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়। জানা গেছে, প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে ডিবি হয়ে মামলাটি সিআইডির কাছে যায়। এ মামলায় কয়েকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। জোট সরকারের সময় প্রথম তদন্ত হলেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। ঘটনার চার বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। এর আগে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট ঘটনা তদন্তে বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশনের দায়িত্ব দেয় সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর কমিশন সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সিআইডির চার্জশিটে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পর তাদের বিচারও শুরু হয়। সে সময় ৬১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আরও ৩০ জনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এবার খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর নাম আসে। এ পর্যায়ে নতুনভাবে অভিযুক্তের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ উল্লেখযোগ্য। তবে অন্য মামলায় মুজাহিদ, মুফতি হান্নান, জেএমবি সদস্য বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। ফলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯-এ। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ আলোচিত এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ৫১১ জনের মধ্যে মোট ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। কারাগারে ও জামিনে থাকা ৩১ আসামিই আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন ২০ জন। বাকি আসামিরা পলাতক। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে ১২০ কার্যদিবসের শুনানি শেষে মামলা দুটি রায়ের পর্যায়ে আসে। দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার বিচার কার্যক্রম একইসঙ্গে চলে। দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের দিন ধার্য করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর