তোমরা কে কে আছ? কে চাও আমাকে? হ্যাঁ, ঘনিষ্ঠভাবে চাও কি আমাকে? তাহলে ইনবক্সে আসো। বেশি খরচ করতে হবে না। বিকাশে টাকা পাঠাও। তাহলে সব হবে। কথাবার্তা থেকে শুরু করে বাদ থাকবে না কিছু। আর যারা বিকাশ করবে না, তাদের ইনবক্স করার প্রয়োজন নেই। ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপসে তরুণীদের এমন উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিতে সরব যুবসমাজ। রাত বাড়ে, বাড়ে অশ্লীলতা। আলো-আঁধারির পরিবেশে গানের তালে শরীর প্রদর্শন করতে শুরু করে তারা। অনেকের শরীরেই কোনো কাপড় থাকে না। আবার কারও কারও মুখে কড়া মেকআপ। কণ্ঠে তাদের মাদকতা। লাইভে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বলে যাচ্ছে, এই, বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাও। তাহলে আমার শরীর দেখতে পাবে। আমি তোমাদের ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ভাইবারে আসতে বলব। নম্বর দেব। সেখানে নক কর। তাহলেই আমাকে পাবে। ফোন সেক্স করলে তাড়াতাড়ি বিকাশ কর। এসব কথা বলেই একটু পরপর আড়ালে চলে যায় সেসব তরুণী। দর্শকরা যে যেভাবে পারছে বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অশ্লীল কর্মকান্ডে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা ভিডিও কলে লাইভে কথা বলি। আবার দূরে যারা থাকে, তাদের সঙ্গেও জরুরি কথা বলি। অনেক দিন বাড়ির বাইরে, পরিবারের বাইরে যারা রয়েছে, প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা লাইভে কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের এ লাইভ ভিডিও কল কখনো কখনো সময় কাটানোর জন্য কিংবা মাস্তি সময় উপভোগ করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বিগোর মতো অ্যাপসকে ব্যবহার করছে অনেকে সে কাজে। আর এই বিগো লাইভ অ্যাপস ব্যবহার করে এক শ্রেণির মেয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পুরুষদের কাছ থেকে। বিশেষ করে তাদের টার্গেট থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যৌনতার ফাঁদে ফেলে তারা কৌশলে বিকাশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি যুবকদের কাছে এ অ্যাপসটি দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে কষ্টার্জিত আয়ের সিংহভাগ তুলে দিচ্ছে এই বিগো লাইভে থাকা নারীদের হাতে। টাঙ্গাইলের মোশাররফ হোসেন জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে। সেখানে প্রতিদিন সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হন। ঘরে ফেরেন রাত ১০টার কিছু পরে। সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করেন। প্রতিদিন মোশাররফ যখন ঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের ঘড়ির কাঁটা রাত ১টা ছাড়িয়ে যায়। তাই পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে পারেন না। মোশাররফ বলেন, ‘রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন বাংলাদেশ সময়ে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করি না। প্রথমত তাদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে, দ্বিতীয়ত এত রাতে ফোন করে তাদের কষ্টের কথা শোনালে হয়তো তাদেরও মন খারাপ থাকবে।’ গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে কি হবে, বাংলায় কথা বলার জন্য মোশাররফ ঠিকই একটি মাধ্যম খুঁজে বের করেছেন। বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছেন বিগো লাইভ নামে একটি অ্যাপস আছে যেখানে সারা রাত টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। বন্ধুর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর ‘বিগো লাইভ’ ইনস্টল করে ব্যবহার শুরু করেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যে আলাপ হয় মেঘবালিকা নামের একজনের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে প্রথমে ইমো নম্বর নিয়ে সেখানে কয়েক দিন ভিডিও চ্যাট করেন। এক সময় নিজেদের মধ্যে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন তারা। তবে এগুলোই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারেননি মোশাররফ। কিছুদিন পর মেঘবালিকা তাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবি করে বলেন, না দিলে ওই নগ্ন ভিডিও তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন। বাধ্য হয়ে মোশাররফ তাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার মাসখানেক পর আবার তার কাছে দাবি করা হয় ৩০ হাজার টাকা। তার মতো অসংখ্য প্রবাসী যুবক টাকা-পয়সা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত। তবে এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের অনেক তরুণ-তরুণী। কিন্তু বিষয়টি ‘লজ্জা’র হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য কারও সহায়তা নিতে যাননি তিনি। অ্যাপসটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, এটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একটি বোর্ডে (ভিডিও চ্যাটে) যুক্ত হতে পারেন আটজন পর্যন্ত। তারা একই সঙ্গে নিজেদের দেখতে ও শুনতে পারেন। এ ছাড়া তাদের চ্যাটিং (ভিডিও) দেখতে পারেন অ্যাকাউন্টধারী যে কেউ। দেশে এই অ্যাপসটির ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল গল্প, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয় এখানে। অনেকেই খুঁজতে থাকেন প্রতারণার সুযোগ। কেউ ফাঁদে পা দিলেই তার সর্বস্ব লুটে নেওয়ার উপায়ও তাদের জানা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উপদেশমূলক বক্তব্যও প্রচার করা হয় এখানে। সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম্পত্য জীবনে হতাশা আর অশান্তিতে থাকা পুরুষদের ফাঁদে ফেলেই সর্বনাশ ঘটাচ্ছে বিগো লাইভ। দীর্ঘদিন স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্নের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের টার্গেট করেও জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে অ্যাপসটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনাকে আমরা বলি অনলাইন ভিকটিমাইজেশন। এখানে একজন তরুণী বা নারী যেভাবে অন্যের সঙ্গে কথা বলে তা আমাদের সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খায় না। এসব সাইট ও অ্যাপস চলতে থাকলে যুবসমাজের সামাজিক পরিচ্ছন্নতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ব্যাহত হবে। ফল হিসেবে সামাজিক সম্মানহানির ঘটনা ঘটবে। ধর্ষণ, ইভ টিজিং বাড়বে।
শিরোনাম
- ভারতকে হারিয়ে ২২ বছরের আক্ষেপ ঘোচালো বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও ছেঁড়া নোট বদল বন্ধ
- হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় তার কৃতকর্মের ফল : প্রিন্স
- ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দেখে যেতে পারেননি মওদুদ, এটা দুঃখজনক’
- ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা
- রাজধানীর কুড়াতলীতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট
- হাসিনার পক্ষে অবস্থানকারী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতের দাবি চার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের
- জার্মানিকে উড়িয়ে টানা দ্বিতীয় জয় বাংলাদেশের
- যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি তৎপরতায় লিপ্ত ৮০ হাজার বিদেশীর ভিসা বাতিল
- ট্রাম্পের শুল্ক সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ
- ঢাবির সেই ডেপুটি রেজিস্ট্রার কারাগারে
- রংপুর সদর আসনে বিএনপির সামু’র নির্বাচনী প্রচারণা
- বগুড়ার সাবেক ডিসির বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীর মামলা
- নারায়ণগঞ্জে যৌথ অভিযানে ৩ কোটি টাকার চায়না দুয়ারি জাল জব্দ
- চট্টগ্রামে শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
- কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ও থানায় ককটেল হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
- হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে : আমানউল্লাহ
- আখাউড়ায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ আটক ২
- ‘হাসিনার রায়ের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হয়েছে’
- শেকৃবিতে পুনর্জন্ম কৃষি নিয়ে গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত
আমাকে চাইলে বিকাশ কর
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর