খুলনায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে আলাদা ঘটনায় একই রাতে চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে খুলনার মোল্লাপাড়া এলাকায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের আগে বিদ্যুতের তার কেটে দিয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার করে দেয় খুনিরা। এরপর একে একে দুই শিশু ও তার নানিকে হত্যা করে। লাশ লুকিয়ে রাখা হয় বেডরুম থেকে একটু দূরে মুরগির খামারে। এরপর ঘরের ভিতরে অপেক্ষা করতে থাকে খুনিরা। শিশু দুটির বাবা-মা চাকরিজীবী শেফার আহম্মেদ ও রুবি আক্তার কর্মস্থল থেকে একে একে বাড়ি ফিরলে তাদেরকেও হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল খুনিদের। কিন্তু রাতে দুজনই একসঙ্গে গৃহশিক্ষক নাহিয়ান হাসান আরাফাতকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলে হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে বাড়ির পেছনের দিকে লাশ দেখে ওই তিনজন সেখানে গেলে বাড়ির সামনের দিকের দরজা খুলে খুনিরা পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর রুবি আক্তার পুলিশকে এসব কথা জানায়। রুবি আক্তার বাগেরহাটের রামপালে ভূমি অফিসে কর্মরত। ঘটনার সময় তিনি কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। শেফার আহম্মেদ খুলনা চেম্বার অব কমার্সে চাকরি করেন।
বাড়ির গৃহশিক্ষক আরাফাত জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর প্রতিদিনের মতো বাড়িতে দুই ছেলেমেয়েকে পড়াতে এলে বাড়ির ভিতর থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পান। এশার নামাজের পর আবার তিনি বাড়ির সামনে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় শিশু দুটির বাবা-মা এলে তিনজনই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। পরে খোঁজাখুঁজি করে অন্ধকারের মধ্যে লাশ পাওয়া যায়। নিহতরা হলেন- সাহিদুন্নেছা (৫৫), তার নাতি মোস্তাকিম (৯) ও ফাতিহা আহম্মেদ (৮)। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
লবণচরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, রবিবার রাতে লবণচরা এলাকা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শিশু ও তাদের নানি রয়েছেন। শিশু দুটির বাবা-মা চাকরি করেন। সকালে তারা শিশু দুটিকে নানির কাছে রেখে কর্মস্থলে যান। সন্ধ্যায় তারা দুজন বাড়িতে ফিরে এসে দরজায় নক করলে ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে পিছন দিক থেকে ঘরে ঢুকলে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের তিনজনের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন ছিল। রুবি আক্তার জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের জের ধরে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের শত্রুতা ছিল। তাদের বাড়ির জাল দলিল করা হয়েছিল। মাদক মামলায় প্রতিপক্ষ কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার হয়। জামিনে বের হয়েই তাদের সবাইকে একসঙ্গে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঘটনার সময় গৃহশিক্ষকও তাদের সঙ্গে থাকায় হত্যাকারীরা কৌশল বদলে পালিয়ে যায়। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
অপরদিকে একই রাতে খুলনার করিম নগর এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে আলাউদ্দিন মৃধা (৩৫) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত আলাউদ্দিন ওই এলাকার বাসিন্দা মনা মুন্সির ছেলে।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই সুমন হাওলাদার জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিহত আলাউদ্দিন স্ত্রীসহ ঘরের বারান্দার সিঁড়িতে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় ৬-৭ জন দুর্বৃত্ত বাড়িতে ঢুকে আলাউদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দুটি গুলি তার বুকে ও পেটে লাগে। পরে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আলাউদ্দিন মাদক মামলায় জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মাত্র ১০ দিন আগে জামিনে মুক্তি পান।