মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভনে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা। আর এ থেকে আত্মরক্ষার জন্য খুন করা হয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে (৪০)। রাজধানীর ভাটারা এলাকায় এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দম্পতির বর্ণনা ছিল এমনই। তবে পুলিশ তদন্ত করে দেখে শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দিয়ে বাসায় ডেকে এনে টাকা আদায় করাই ছিল এই দম্পতির পেশা। টাকা আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন করা হয় সাইফুলকে। চার দিন নিখোঁজ থাকার পর ২৭ জুন ভাটারার একটি বাসা থেকে উদ্ধার হয় সাইফুলের লাশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল ওই বাসার তরুণ ভাড়াটিয়া দম্পতি। রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি)। এরপর গত ১২ জুলাই বিকালে রাজধানীর বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় আপেল-শান্তা দম্পতিকে। এ সময় আবদুর রাকিব চৌধুরী (২২) নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জব্দ করা হয় হত্যাকাে  ব্যবহৃত ছুরিটিও। জানা যায়, ২৫ জুন সাইফুলের স্ত্রী মিনারা পারভীন তার স্বামী নিখোঁজের ঘটনায় রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি তার জিডিতে উল্লেখ করেন- তার স্বামী আগের দিন দুপুরে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। জিডি এবং গাড়ির সূত্র ধরে গত ২৬ জুন ভাটারা থানা পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় ভাটারার মাদানি এভিনিউ-এর ১০০ ফুট সড়ক থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে। পরদিন ভাটারার সাঈদনগর পূর্বপাড়া মসজিদ গলির আনোয়ার হোসেনের বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে সাইফুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, পূর্বপরিচিত সাইফুল তাদের বাসায় বেড়াতে এসে শান্তার সঙ্গে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। এতে বাধা দিলে শান্তাকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুল। এতে কেটে যায় শান্তার পা। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মদ্যপ সাইফুল নিজের ছুরির আঘাতেই মারা যান। তবে শান্তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে কিছুটা বিশ্বাস হয় তদন্ত সংশ্লিষ্টদেরও। এরপর তাদের কোথায় যেন একটু দ্বিধা থেকে যায়। পরে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে সব স্বীকার করেন আপেল-শান্তা দম্পতি। শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে সাইফুলকে ডাকা হয় বাসায়। কিন্তু বাসায় আসার পর সাইফুলের জামা কাপড় খুলে নেন আপেল ও তার বন্ধুরা। দাবি করা হয়, মোটা অঙ্কের টাকা। সাইফুল চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে ছুরিকাঘাত করে আপেল। সেই আঘাতের একটি এসে লাগে শান্তার পায়ে। শান্তা বলেন, আমাকে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলে আমাকে ফোন দিতে বললে, আমি সাইফুলকে ফোন দেই। আপেল বলেন, সে যখন পড়ে যায়, তখন তার মুখে ওড়না গুঁজে দেই। তার ধস্তাধস্তির একসময় আমার হাতের ছুরিতেই আঘাত লাগে আমার স্ত্রীর পায়ে। ডিবি পুলিশ বলছে, ঘটনার পরদিন সকালে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩০০ ফুট সড়ক এলাকায় একটি সেতুর নিচে ছুরিটি ফেলে যায় শান্তা। তার দেখানো মতে, উদ্ধার করা হয় ছুরিটি। শান্তার মোবাইলফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, ১৫ দিনে ৬ হাজার ফোন করেছে সে। এ থেকেই বোঝা যায় ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করাই ছিল তাদের পেশা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, আপেল আহমেদ (২৭) ফুটপাথে কখনো ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি, কখনো ভাসমান রেস্টুরেন্ট, কখনো ফলমূল বিক্রি করতেন। করোনার কারণে আয়ের পথ বন্ধ হলে আর্থিক সংকটে পড়েন। পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য বন্ধু রাফি তার সঙ্গে এই পরিকল্পনা করেন। পরে আপেল তার স্ত্রী শান্তা ইসলামের মাধ্যমে ফোনে আমোদ-ফুর্তি ও অসামাজিক কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সাঈদনগরে তাদের বাসায় নিয়ে এসে আটক করে। প্রথমে সাইফুলকে বিবস্ত্র করে ছুরির উল্টো দিক দিয়ে মারধর করে এবং টাকা চাইতে থাকে। আগেই ওই বাসায় আপেল স্থানীয় নোমান ও হাসানকে ডেকে এনেছিল। পাশাপাশি দুরসম্পর্কের ফুফাতো ভাই রাকিবকেও ডেকে আনে। একপর্যায়ে নোমান ও হাসান চলে যায়। কোনো এক সুযোগে সাইফুল পালানোর চেষ্টা করলে রাকিব প্রথমে টেনে ধরে এবং আপেল উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এই ছুরিকাঘাতেই সাইফুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত রাফিকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর