বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কলিমউল্লাহর দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অবহেলা, ধীরগতিসহ নানা অসঙ্গতি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া লঙ্ঘন, নকশা পরিবর্তন করে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসঙ্গতিরও প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনৈতিক, অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ।

এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এই দায়দায়িত্ব বহন করা উচিত। এসব ঘটনায় ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ কয়েক দফা সুপারিশ করেছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি একনেক সভায় ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছাত্রীদের আবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নামে শেখ হাসিনা হল এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য একটি স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ১ জানুয়ারি ২০১৫ হতে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক মনোওয়ার হাবিব ও প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড যৌথভাবে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ১৪ জুন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ তদারকি করার জন্য প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরকে দ্বিতীয় পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ ওঠে, শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের মূল নকশা পরিবর্তন করে একটি অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ ভবন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। অনুমোদিত ডিপিপির তোয়াক্কা না করেই ভবন দুটির নকশা পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় দুই গুণেরও বেশি। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবনে নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয় ৬১ কোটি টাকা। আর ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে মূল ডিপিপিতে পরামর্শক ফি না থাকলেও উপাচার্য সেই খাতে ব্যয় করেছেন ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো নিয়মই মানেননি উপাচার্য। এ ছাড়া শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য প্রকৃত নকশার ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে ওই ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় ড্রয়িং বা ডিজাইনের কোনো ধরনের প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে না। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা উচিত। দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। যা সরকারি ক্রয় পদ্ধতির নিয়ম বহির্ভূত। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর