হাত ভাঙা, ঘাড় মটকানো। ছয় বছরের ফুটফুটে একটি শিশুর লাশ এভাবে পাওয়া গেল সাতসকালে। তাও আবার বাসার ভিতর পানির ড্রামে! শিশুটির মা বলছেন, ভূত-প্রেত তার মেয়েকে ঘাড় মটকে দিয়েছে। এরপর থেকেই গোটা এলাকায় রটে গেছে- শিশুটিকে ভূতে ঘাড় মটকেছে। সকাল থেকেই বাসার সামনে মানুষের ভিড়। শত শত মানুষ বাসার ভিতর ঢুকছে। আর হা-হুতাশ করতে করতে বের হচ্ছে। শহরে ভূতের আছর! মানুষের মধ্যে ভয়। পুলিশের কানেও কথাটা চলে যায়। ছুটে আসে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মর্গে। শুরু হয় পুলিশের তদন্ত। অদৃশ্য কোনো খুনিকে খুঁজে বের করার গুরুদায়িত্ব পড়েছে পুলিশের ওপর। খুনি কে? অদৃশ্য নাকি, দৃশ্যমান? পুলিশের তদন্ত এখন সেটাই। শিশুটির নাম মাইমুনা। বাসায় ছিলেন মাইমুনার দাদি, মা, ছোট বোন আর বাবা। প্রত্যেককেই পুলিশ জেরা করছে। মা বলছেন, ভূতের আছর। কিন্তু আর কেউ তা বলছে না। ৭০ বছর বয়সী দাদি ফুলজাহান বেগমের সন্দেহ মাইমুনার মা শারমিনের দিকে। শারমিন মাইমুনার সৎমা। দিনভর তদন্ত শেষে পুলিশেরও সন্দেহ হয় সৎমা শারমিনকে নিয়ে। অবশেষে পুলিশের নানা কৌশলে খুনের রহস্য বেরিয়ে আসে। পুলিশ নিশ্চিত হয়, খুনি অদৃশ্য কেউ নয়। খুনি একদম দৃশ্যমান। আর খুনি হলেন মাইমুনার সৎমা শারমিন। মাইমুনা স্থানীয় আয়শা সিদ্দিকা মহিলা মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর আগে তার মা রুনা আক্তারের মৃত্যু হয়। এক বছর বয়সে মাকে হারানোর পর দাদিই ছিল তার কাছে সব। বাবা থাকলেও সৎমায়ের সংসারে পান থেকে চুন খসলেই মারধর ছিল তার ‘প্রাপ্য’। তবু সেই সৎমায়ের ‘ভয়’ কাটাতে ঘটনার আগের রাতে তার সঙ্গে ঘুমাতে গিয়েছিল মাইমুনা। কিন্তু সদা চঞ্চল শিশুটি আর ঘুম থেকে জেগে দাদির কাছে যেতে পারেনি। সকালে তার হাত ভাঙা, ঘাড় মটকানো লাশ মিলেছে তাদেরই বাসার গোসলখানার পানির ড্রামে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ মাইমুনার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ মাইমুনার সৎমা সুমাইয়া ইসলাম শারমিনকে গ্রেফতার করে। নিষ্ঠুর ওই ঘটনার খবর শুনে শত শত মানুষ ভিড় করেন ধলপুরের ওই বাসায়। মা হারানো শিশুর এমন হত্যাকান্ডে অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে শিশু মাইমুনার নামে ৭ লাখ টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপট (এফডিআর) রয়েছে। এটা আত্মসাতের ইচ্ছা ছিল শারমিনের। শারমিন পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ঘুমের ঘোরে দেড় মাস বয়সী সৎবোন কিফতিয়ার গায়ে পা তুলে দিয়েছিল মাইমুনা। ব্যথা পেয়ে কিফতিয়া কেঁদে ওঠে। আমি নিজেই তখন ভূত-প্রেত হয়ে যাই। হেঁচকা টানে মাইমুনার পা এনে কামড় বসিয়ে দিই। ব্যথায় চিৎকার করে উঠলে মাইমুনার মুখে বালিশ চেপে ধরি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইমুনা নিস্তেজ হয়ে যায়। বালিশচাপায় মাইমুনা নিস্তেজ হয়ে পড়লেও রাগ কমেনি আমার। তার ঘাড় মটকে দিই। জানাজানি হওয়ার পর আমি সবাইকে বলি ভূত-প্রেত মেরেছে মাইমুনাকে।’ ঘটনার পর মাইমুনার দাদি পুলিশকে জানান, দুই রুমের ওই বাসায় মাইমুনা প্রতিদিন তার সঙ্গে ঘুমাত। বৃহস্পতিবার সকালে তার ছেলে আবদুর রাজ্জাক মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় শারমিন মাইমুনাকে তার সঙ্গে ঘুমাতে বলে। বৌমা আমাকে জানায়, ‘একা ঘুমাতে ভয় লাগে, আজ রাতে মাইমুনাকে নিয়ে ঘুমাব। আমি প্রথমে আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত বৌমার কথা ফেলতে পারিনি। পরে সৎমায়ের ঘরে ঘুমাতে যায় মাইমুনা। ভোরবেলায় বাথরুমের সামনে মাইমুনার স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখি। পরে বাথরুমে গিয়ে ড্রামের ভিতর উপুড় অবস্থায় লাশ দেখে চিৎকার করে উঠি। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ সকালে মাইমুনার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাটি যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের। ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনা এটি।
শিরোনাম
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৯ জুলাই)
- বৈষম্য সংস্কৃতির শত্রু দারিদ্র্যও
- নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে
- সেন্টমার্টিনে এক লাখ ৪০ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১৭
- এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ খতিয়ে দেখা দরকার : এ্যানি
- ১৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ বাটলারের
- মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
- উলভসের হল অব ফেমে জায়গা পেলেন জটা
- চূড়ান্ত সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারেক রহমান : রিজভী
- শ্রোতাদের জন্য হাবিবের নতুন গান ‘দিলানা’
- কোটি মানুষের একটাই দাবি—ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া : মঈন খান
- পঞ্চগড়ে বিএনপির মৌন মিছিল
- ইন্টারনেট শাটডাউন রোধে আসছে আইন : ফয়েজ আহমদ
- কাপ্তাই হ্রদের উন্নয়নে দুই উপদেষ্টার মতবিনিময়
- সরকারের কোলে একদল, কাঁধে আরেক দল : মির্জা আব্বাস
- চলতি মাসে জুলাই সনদ না হলে দায় সরকার আর ঐকমত্য কমিশনের : সালাহউদ্দিন
- সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে ৩ জনের মৃত্যু
- মার্কিন কূটনীতিকদের বিদেশি নির্বাচন নিয়ে মতামত না দিতে নির্দেশ
- বাফুফের ফুটসাল ট্রায়াল শুরু রবিবার
- গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় আরও বাড়ল