শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মেগা প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে খুলনা

বিনিয়োগ বাড়বে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

মেগা প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে খুলনা

খুলনা-মোংলা রেললাইন (ওপরে), শেরেবাংলা রোডে চার লেন ও মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবারও শুরু হয়েছে মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। অর্থনীতিবিদদের মতে, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনা-মোংলা রেললাইন ও চার লেন সড়ক, মোংলা ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শিল্প ও বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে বাড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। তৈরি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

জানা যায়, মোংলা বন্দরকে গতিশীল করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৭ সালে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি মোংলা বন্দরের মালামাল লোড-আনলোডে গতি ফিরবে। সেই সঙ্গে নাব্যতা বজায় রাখতে মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও জেটির অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)। তবে সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কথা জানিয়ে রূপসার জাবুসা মৌজায় ৬৩৯ একরের আরেকটি জমিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বটিয়াঘাটা ও রূপসার দুটি প্রস্তাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রূপসায় অবস্থানগত সুবিধা বেশি ও বটিয়াঘাটায় নদীর পাড়ে অনেক খাস জমি আছে। খুলনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এদিকে বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন তালিকায় রয়েছে- খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েলফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুর্যোগ মোকাবিলায় হাজার কোটি টাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, জলাবদ্ধতা নিরসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু প্রকল্প। সরকারি অর্থায়নে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদ উন্নয়নকর্মীদের মতে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে বিনিয়োগ পরিবেশ। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। শিল্প খাতের বিকাশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আয় বৈষম্য হ্রাস পেলে তা বিনিয়োগে ভারসাম্য আনবে। তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা সম্পাদক কুদরত-ই খুদা বলেন, যেসব মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে তা থেকে আরও সুফল মিলবে যদি সব সেক্টরে ‘সমান্তরাল উন্নয়ন’ হতে পারে। সব ক্ষেত্রে সমান উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়বে।

সর্বশেষ খবর