মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করে : প্রধানমন্ত্রী

বানভাসিদের জন্য ত্রাণ তহবিলে পদ্মাসহ ৪৫ ব্যাংকের অনুদান

প্রতিদিন ডেস্ক

উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করে : প্রধানমন্ত্রী

বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করছে। কারণ উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গতকাল সকালে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। খবর বাসস। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুদান গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রেল যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত ও নতুন নতুন রেলপথ স্থাপন এবং সেতু নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলো খনন করছি। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করে এবং বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, এসবের পাশাপাশি নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথও আমরা সচল করেছি। আমাদের পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেল যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। আমরা তা আবার নতুন করে চালুর পাশাপাশি নতুন নতুন রেললাইনও করে দিচ্ছি। ফলে দেশের যোগাযোগব্যবস্থাও বাড়ছে। তিনি বলেন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আমরা আরও গতিশীল করার জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশেরই এক ব্যক্তির প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরাও সরে দাঁড়ায়, তখন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। তখন দেশের জনগণের পাশাপাশি আপনারাও অনেকে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। দেশের জনগণই তাঁর ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সাহস এবং সহযোগিতা এবং তারা পাশে থাকাতে আমরা আমাদের নিজস্ব টাকায় এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল অঞ্চল যেটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল সেখানে এখন শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। সেখানেও আপনাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে এবং এই অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রথমবার সরকারে আসার পর তাঁর সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছিল যেখানে বিদ্যুৎ, রেল এবং গ্যাস সংযোগও প্রদান করা হয়। পদ্মা সেতুটাও সেভাবেই করা হয়েছে, মাল্টিপারপাস। সেখানেও গ্যাস, বিদ্যুৎ, রেল সংযোগের সঙ্গে অত্যাধুনিক ওয়াইফাই সুবিধাও থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিভাগে পর পর তিনবার বন্যা হলো। সেখানে যেমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেমনি পানি যখন নেমে আসছে তখন নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিনি এ দেশের যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের উন্নয়নও করতে হবে, আবার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য যততত্র শিল্প যাতে গড়ে না ওঠে এবং কৃষিজমি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পদ্মাসহ ৪৫ ব্যাংকের অনুদান : দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছে পদ্মা ব্যাংকসহ ৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষে অনুদানের চেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের হাতে তুলে দেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খান।

আরও যেসব ব্যাংক অনুদান দিয়েছে : সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল, ইডকল, বিআইএফএফএল, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।

সর্বশেষ খবর