বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

শিল্পীর রংতুলিতে গ্রাম বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শিল্পীর রংতুলিতে গ্রাম বাংলা

সারি সারি তালগাছ। মাঝ দিয়ে পাশের গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে মেঠোপথ। মেঠোপথ দিয়ে গরু নিয়ে মাঠের দিকে ছুটছে রাখাল। পথের ধারে সোনালি ধান। পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ছোট্ট নদী। নদীতে নৌকা বাইছে মাঝি। আহা কী সুন্দর! নয়নাভিরাম। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই অপরূপ সৌন্দর্য। ইট-পাথরের যুগে আর হরহামেশায় চোখে পড়ে না খেয়া পারাপারের, দেখা মেলে না ধান কাটতে ব্যস্ত কাস্তে হাতে কৃষকের ছবি। তবে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই অপরূপ সৌন্দর্যগুলো প্রতিনিয়তই ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পী নুর আলম। তার শৈল্পিক হাতে রংতুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে স্থান করে নিচ্ছে জীবন্ত বাংলার রূপ।

শিল্পী নুর আলম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। পড়েছেন চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগে। ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে এই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এক বছর মেয়াদি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন। তার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার নটাবাড়ী গ্রামে। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (চারুকলা) হিসেবে কর্মরত। গ্রাম বাংলার জীবন্ত ছবি আঁকার বিষয়ে শিল্পী নুর আলম বলেন, ছোটোবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল। বাবা ও ভাই ছবি আঁকতেন। তাদের অনুসরণ করতেন। নতুন বই পেলে আগে দেখতেন সেই বইয়ের ছবি। পড়ার চেয়ে ছবি দেখে বেশি আনন্দ পেতেন। খাতায়, বইয়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় মনের কল্পনায় আঁকতেন ছবি। কাঠি দিয়ে মাটির ওপরে ছবি আঁকতেন, সেই সঙ্গে বিভিন্ন লেখার ফ্রন্ট আঁকার চেষ্টা করতেন। এমনো সময় গেছে দিনরাত মানুষের প্র্যাকটিক্যাল খাতার ছবি এঁকে। এভাবেই ছবি আঁকার প্রতি দিনের পর দিন আগ্রহ বাড়তে থাকে তার। ছোটবেলা থেকে চারুকলায় শিক্ষাজীবন পর্যন্ত জলরং, তেলরং, অ্যাক্রেলিকসহ প্রায় সব মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক রঙে হারিয়ে যাওয়া ‘বাংলার রূপ’ নিয়ে ছবি আঁকছি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে শৈশবের সেই খেলার মাঠ, পুকুর-নদীতে সাঁতার কাটার ঘাট, নদী পারাপারের সেই সুখময় ঘাট আর নেই। বলতে গেলে শৈশবে আমরা যে গ্রামীণ সৌন্দর্যের ছোঁয়া পেয়েছি সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই পরের প্রজন্মের কাছে বাংলার প্রাচীন রূপের জানান দিতে বাংলার সেই প্রাকৃতিক রূপকে ক্যানভাসে ধরে রাখতে চাই। যেখানে থাকবে গ্রাম বাংলার চিরচেনা দৃশ্যগুলো। নুর আলম বলেন, সবেমাত্র কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। অনেকগুলো আঁকা ছবি আছে। সেগুলো বাজারজাত করার মতো এখনো ভালো কোনো ব্যবস্থা পাইনি।

আমার ছবির দাম নির্ধারিত হয় ছবির সাইজ এবং কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে। চাইলে যে কেউ আমাকে দিয়ে কোনো ছবি এঁকে নিতে পারেন। শিল্পী নুর আলম বলেন, আমার বাস্তবধর্মী ছবি আঁকতে ভালো লাগে। কারণ বাস্তবধর্মী ছবি সবাই বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে।

 

 

সর্বশেষ খবর