শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে ২৪৩ দিনে ৮৩০ ধর্ষণ

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৮৩০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া একই সময়ে নারীদের ওপর পারিবারিক নির্যাতন হয়েছে ৪১১টি, পারিবারিক নির্যাতনে হত্যা হয়েছে ২৫৩টি, পারিবারিক নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা হয়েছে ৭৯টি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৪৮টি। গতকাল ‘নিঃশঙ্ক জীবন চাই : নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজের অঙ্গীকার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নারী নেত্রীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘নারী নিরাপত্তা জোট’ ও ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’।

সংবাদ সম্মেলনে নারী নেত্রীরা জানান, দেশের প্রথমসারির ৯টি পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে নারীদের ওপর নির্যাতনের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। লিখিত বক্তব্যে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটে’র প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ অর্জনে নারীদের একটি বড় অবদান রয়েছে। তারপরও নারীরা ঘরে-বাইরে, সব সম্পর্কে, সব বয়স-শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। দেশে সংঘটিত নারী নির্যাতন মামলাগুলো তদন্তেই বিনষ্ট হয়ে যায়। অধিকাংশ নারী নির্যাতনের মামলার তদন্তে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে নিজের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। আবার অনেক অপরাধী জামিনে বের হয়ে কৌশলে বিচার এড়িয়ে যায়।

এ অবস্থায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ৯টি দাবি তুলে ধরেন নারী নেত্রীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে। উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী, শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় সাক্ষী প্রদান প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করতে হবে। হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ সফল করতে হবে। ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করাসহ সব প্রকার বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতনবিরোধী আইন সংশোধন করতে হবে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক (প্রোগ্রাম) বনশ্রী মিত্র নিয়োগীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মহুয়া লিয়া ফলিয়া, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেটজ বাংলাদেশের ম্যানেজার প্রোগ্রাম আফসানা বিনতে আমিন, আমরাই পারি জোটের সদস্য সেলিনা আহমেদ, নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা, আইনজীবী বশীর আহমেদ চৌধুরী, আইনজীবী হামিদা বেগম ও নির্যাতনে শিকার হয়ে মারা যাওয়া মারুফার মা আকলিমা খাতুন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর