চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়ার প্রতিবাদে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আজ শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) বিভাগীয় কনভেনশন হওয়ার কথা। এখান থেকে ঘোষণা করা হতে পারে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি। এ ছাড়া বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামও।
স্কপের সদস্য তপন দত্ত জানান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই-বিপ্লব হলে সকাল ১০টায় কনভেনশন শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুসহ আমাদের ৯ দফা দাবি রয়েছে। স্কপ যে কোনো ধরনের অস্বচ্ছ চুক্তির বিপক্ষে। আমরা আন্দোলনে আছি। এটি অব্যাহত থাকবে।’
এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যতম বড় টার্মিনাল। বন্দরের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় এ টার্মিনাল দিয়ে। এটি দীর্ঘদিন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল দেশি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর গত ৭ জুলাই নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগং ড্রাই ডক লিমিটেডকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখানে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে অভিযোগ করে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ, স্কপ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনসহ বেশ কিছু সংগঠন। এরই মধ্যে মানববন্ধন, মশালমিছিল, রোড মার্চসহ নানান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘এনসিটি এবং সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত। এ দুটি টার্মিনালের গতি বাড়াতে হলে প্রয়োজনে ইকুইপমেন্ট কিনতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারে। আর কয়েক মাস পরই জাতীয় নির্বাচন। বন্দরের টার্মিনালের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে নতুন সরকার সেটা করবে।’
এদিকে ১৭ নভেম্বর এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে উন্মুক্ত দরপত্রের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে জিটুজির ভিত্তিতে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ) প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেওয়ার ছদ্মাবরণে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া সমঝোতাগুলোই মূলত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জুলাই শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
একই দিন বিবৃতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই বিদেশি সংস্থার হাতে দেওয়া যাবে না। বন্দর রক্ষায় প্রয়োজনে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হেফাজতে ইসলাম প্রস্তুত।’
১০ বিশিষ্টজনের বিবৃতি : চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়ে সম্মিলিত বিবৃতি দিয়েছেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। এতে বন্দর নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের করা চুক্তিগুলো এখতিয়ারবহির্ভূত, আত্মঘাতী ও দেশের স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য বিবৃতিটি পাঠানো হয়।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন কবি আবুল মোমেন, অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম, লেখক ফেরদৌস আরা আলীম, শিশির দত্ত, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার ও কামরুল হাসান বাদল, কমল সেনগুপ্ত, চারুশিল্পী অলক রায় এবং প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।