মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
জুডিশিয়াল সার্ভিস কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী

সবাই যেন পায় ন্যায়বিচার

প্রতিদিন ডেস্ক

সবাই যেন পায় ন্যায়বিচার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়।’

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বাসস অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার বক্তব্য দেন। এতে বিজেএসএ সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিজেএসএর ৫৯তম বার্ষিক কাউন্সিলের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তারা (সংসদ সদস্য) জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইন সংশোধন করেন। বিচারকরা ওই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশের বিচারব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করেছি, যাতে আইনের শাসন ও জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ধরনও বদলে গেছে। এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ করা হয়। সাইবার অপরাধ ঠেকাতে আমরা একটি আইন প্রণয়ন করেছি। এ আইনটি নিয়ে নানা লোকে নানা কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যেভাবে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে, তাতে এটাকে ঠেকাতে এ আইনটি জরুরি। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ঠেকানোর জন্য দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচার চালাতে প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক, শিক্ষক, আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো বাচ্চা যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য আমাদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। ঝালকাঠি ও গাজীপুর আদালতে জঙ্গি হামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিচারকগণ রায় প্রদান করে যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে সারা দেশে বর্তমানে ১০১টি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে এবং সাতটি ট্রাইব্যুনাল মানব পাচার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো পরিচালনা করছে।

 তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, যদি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তবে এ ধরনের অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে মোট ১ হাজার ২২৭ জন বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০ বিচারক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিচারব্যবস্থার উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি আমলের একটি আইন বাতিল করেন, যার ফলে বিচারব্যবস্থায় নারীদের নিয়োগের পথ সুগম হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের আগে তারা কী পেয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর কী পেয়েছেন, তা ভেবে দেখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা বিচারব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পদক্ষেপ গ্রহণকালে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন বিদেশি ফোন কল পান। এ সময় তিনি নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় প্রদানের জন্য বিচারক গোলাম রসুলের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার বন্ধ করতে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে জেল থেকে ছেড়ে দেন। বঙ্গবন্ধু এদের বিচার শুরু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর