বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৃত্যু-বন্ধ্যত্ব উভয়ই বাড়ছে

-ডা. লেলিন চৌধুরী

মৃত্যু-বন্ধ্যত্ব উভয়ই বাড়ছে

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, বায়ুদূষণের কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষ। একদিকে নানা রোগে বাড়ছে মৃত্যু, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা। অনেক দম্পতি একটি সন্তানের জন্য হাহাকার করছে। এর পেছনে বায়ুদূষণও অন্যতম একটি কারণ।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে শুধু বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, স্মৃতিশক্তি লোপ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ব্যক্তিত্বের অবনমনসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। গড় আয়ু বাড়লেও জীবনের বড় একটা সময় হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে পার করতে হচ্ছে। বায়ুদূষণের কারণে সংক্রামক-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই বাড়ছে। এর প্রথম প্রভাব শুরু হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ দিয়ে। হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসের টান বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক কফ, অ্যালার্জিক অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগগুলো হয়। অন্যদিকে বায়ুতে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে গিয়ে লিভার, কিডনিসহ বিপাক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে কিডনি বিকল, লিভার বিকলসহ নানা জাতীয় ক্যান্সার বাড়ছে।

ডা. লেলিন বলেন, কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ বাংলাদেশে অন্যতম একটি পরিবেশ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা দেখছি শীতকালে যখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, তখন ঢাকাসহ দেশের প্রায় সবগুলো নগরীতে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত নগরীর তালিকায় এক থেকে চারের মধ্যে থাকে ঢাকার অবস্থান। এ বায়ুদূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আমাদের গড় আয়ু বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু, এই গড় আয়ুর কতটা সময় আমরা ডাক্তারের চেম্বার, হাসপাতালের শয্যায় কাটিয়ে দেই সে হিসাবটা রাখি না। বায়ুদূষণজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে কত টাকা খরচ করি, স্বাস্থ্য খাতে খরচ কতটা বাড়ছে তার একটা হিসাব হওয়া দরকার। একই সঙ্গে দূষণের কারণে জাতীয়ভাবে প্রতি বছর কত বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে সেটারও হিসাব হওয়া দরকার। তাহলে বোঝা যাবে এই বৃদ্ধি পাওয়া গড় আয়ুর কতটা মানুষ রোগী হিসেবে পার করছে, আর কতটা অংশ ভোগ করতে পারছে।

ডা. লেলিন বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালত অনেকগুলো নির্দেশনা জারি করলেও সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবহাওয়া অধিদফতর প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি ও শীতের পূর্বাভাস দেয়। বহুদিন ধরে আমরা বায়ুদূষণের মাত্রাটা নিয়মিত জানানোর দাবি জানিয়ে আসছি। সম্ভাব্য দূষণমাত্রার আগাম বার্তা দিতে বলছি। তারা সেটা করে না। এটা হলে মানুষ পরিস্থিতি বুঝে মাস্ক ব্যবহার বা অন্য ব্যবস্থা নিতে পারবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে সংস্থাগুলোর, তাদের তেমন ভূমিকাই রাখতে দেখছি না। এটা নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, তখন তারা বলে অচিরেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ অচিরের অবসান আর হয় না।

সর্বশেষ খবর