শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কার ভুলে বিপাকে চাকরিপ্রার্থীরা

আকতারুজ্জামান

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ডিসেম্বরে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের সুপারিশ পেতে আবেদন করছেন। কিন্তু ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে নিবন্ধনধারী শত শত প্রার্থী এতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ, এ পদটিকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সনদ দেওয়া হলেও গণবিজ্ঞপ্তিতে এ পদের জন্য আট বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। এতেই চাকরিপ্রার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ সংশোধন করা হলেও সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়, আগের নীতিমালায় সম্পন্ন হওয়া সব কাজ বৈধ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু এরপরও ইবতেদায়ি প্রধান পদে উত্তীর্ণদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ প্রার্থীরা এখন নিয়োগ পেতে এনটিআরসিএ আর মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে ধরনা দিলেও আশার বাণী শুনতে পাননি।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, ইবতেদায়ি প্রধান আর সহকারী মৌলভি পদে একই যোগ্যতায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর সহকারী মৌলভি পদটি  সংশোধিত নীতিমালাতেও অ্যান্ট্রি পদ হিসেবে রাখা হয়েছে। তাই সহকারী মৌলভি পদে হলেও নিয়োগ চান তারা। কারণ, নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। নিয়োগ দাবিতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে দফায় দফায় লিখিত আবেদন করেছেন তারা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী পঞ্চদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০১৮-এর বিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ি প্রধানের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে- ফাজিল বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। কিন্তু অভিজ্ঞতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ পদের প্রার্থী হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। পঞ্চদশ নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি। এরপর নীতিমালা সংশোধন করা হয়। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে- ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে ইবতেদায়ি মৌলভি পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এতেই বিপাকে পড়েছেন অভিজ্ঞতাহীন নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা। কারণ তারা নিবন্ধন পাস করেছেন অ্যান্ট্রি পদ হিসেবে, তাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। তাই উত্তীর্ণ এই প্রার্থীদের ভবিষ্যতে নিয়োগ পাওয়ার পথও সংকুচিত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। তখনো ইবতেদায়ি প্রধান পদে উত্তীর্ণ নিবন্ধনধারীরা আবেদনের সুযোগ পাননি। ফলে এ বিষয়ে নিবন্ধনধারী বৃহৎ অংশের চাকরিপ্রার্থী বেকার হিসেবে দিন কাটাচ্ছেন। ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধন পাওয়া চাকরিপ্রার্থী মো. শাহীদুজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের যদি নিয়োগ না দেবে তাহলে পরীক্ষা কেন নেওয়া হলো? কষ্ট করে পাস করেও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছি না আমরা। তিনি বলেন, সংশোধিত নীতিমালাতেও আমাদের নিয়োগ দেওয়ার পদ উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজর না থাকায় নিয়োগ পাচ্ছি না আমরা। অবিলম্বে এ নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানান তিনি। এই চাকরিপ্রার্থী দাবি করেন, অ্যান্ট্রি পদ হিসেবে এর আগেও ইবতেদায়ি প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অনুসরণীয় পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির অনুমোদন সাপেক্ষে অ্যান্ট্রি পদে শিক্ষক নিয়োগ করতে এনটিআরসিএতে চাহিদা প্রেরণ করা হয়। সে চাহিদার ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে এনটিআরসিএ। কিন্তু এনটিআরসিএর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হলেও এই চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। ইবতেদায়ি প্রধান বিষয়ে নিবন্ধনধারীদের জটিলতা সম্পর্কে বক্তব্য জানতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান ও সচিব ওবায়দুর রহমানকে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর