শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রামপালে আবার উৎপাদন শুরু

এলসি জটিলতা ও ডলার সংকটে ফের বন্ধের শঙ্কা

জিন্নাতুন নূর, রামপাল (বাগেরহাট) থেকে

কয়লা সংকটে এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট। কিন্তু এলসি (ঋণপত্র) খোলার জটিলতা স্বাভাবিক না হলে কয়লা সংকটে এপ্রিলের পর ফের কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর সঙ্গে উৎকণ্ঠা আছে ডলার সংকট নিয়েও। গতকাল রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে।

তিনি বলেন, এখন পাইপলাইনে যে কয়লা রয়েছে সেটি দিয়ে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালানো সম্ভব। এর মধ্যে এলসি জটিলতা না কাটলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে। ফলে কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে আমরা কয়লার চাহিদা পূরণের জন্য এলসি খুলেছি। এটি দিয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। কিন্তু এরপর কী হবে তা জানা নেই। সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, কোম্পানি আরও ২ লাখ টন কয়লা আমদানির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য আগামী সপ্তাহে আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মোংলা বন্দরে আসছে। এক্ষেত্রে আগামী মে মাসে ফের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে গ্রীষ্মকালে আবারও বিদ্যুৎ সংকটে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়লা খালাসের জেটির সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, জেটির সক্ষমতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তিনটি জেটি থেকে দৈনিক আনলোড করার সক্ষমতা রয়েছে ১২ হাজার টন, কিন্তু একটি ইউনিটে কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টন। জুনে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে দুই ইউনিটে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন হবে ৯ হাজার টন। সে হিসাবে প্রয়োজনের চেয়ে কয়লা আনলোড করার সক্ষমতা বেশি। সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রতি ইউনিট ১৩ থেকে ১৪ টাকা। সামনে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমে আসলে উৎপাদন খরচও কমে আসবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, পুরো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। একটি ইউনিটের কাজ শেষ করে ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন আগামী জুনে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এক মাস বন্ধ থাকার বিষয়ে সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, ডলার সংকটে এলসি খোলা যায়নি, যার কারণে কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হয়। এখন কয়লার সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় পুনরায় কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। আশা করছি, এলসি জটিলতা না থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারব। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার রাত ১১টা ৩ মিনিটে পুনরায় উৎপাদন শুরু করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট। গতকাল দুপুরে কেন্দ্রটি থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। পর্যায়ক্রমে উৎপাদন আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় আবারও কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি কয়লাবাহী জাহাজ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরেকটি কয়লাবাহী জাহাজ এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গত ১৫ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। গত ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে জাতীয় গ্রিডে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এলসি জটিলতায় কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কয়লা সংকটে গত ১৪ জানুয়ারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রটিতে কয়লা মজুদের সক্ষমতা রয়েছে তিন মাসের। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের কয়লা মজুদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগে কেন্দ্রটিতে কয়লার কোনো মজুদ ছিল না।

 

 

সর্বশেষ খবর