আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার আবেদন যাচাই-বাছাই করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২১০টি সংস্থা আবেদন করলেও যাচাই-বাছাইয়ে অনেক সংস্থা বাদ পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব সংস্থা আগে নিবন্ধন পেলেও কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি, সঠিক সময়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিবেদন দেয়নি, এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সংস্থাগুলোকে এবারে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিবন্ধন দেবে না ইসি। তবে ইসির যাচাই-বাছাইয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে নিবন্ধিত সংস্থা আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে।
এদিকে নবম সংসদ নির্বাচনে দেশীয় ৭৫টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি সংস্থা, ইসির নিবন্ধনও পায়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান নিবন্ধিত সংস্থাগুলোর মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ১১ জুলাই। সেক্ষেত্রে ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে চূড়ান্ত কার্যক্রম শেষ করা হবে।
জানা গেছে, নির্ধারিত সময় ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৯৯টি এবং নির্ধারিত সময়ের পর আরও ১১টি সংস্থার আবেদন জমা পড়েছে। এসব সংস্থার আবেদন যাচাইয়ে ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই সভাও করেছেন। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এসব সংস্থার প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হবে। এরপর প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ে যাদের আবেদন টিকবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দাবি-আপত্তি আছে কি না জানতে ১৫ দিনের মধ্যে সময় দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাহলে কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করবে। শুনানি শেষেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে যে কোনো দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করবে। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ১১৯টি সংস্থাকে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সে সময় পুরনো পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমা ও ব্রতী নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে না পারায় নিবন্ধনের বাইরে ছিল। ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, নিবন্ধন চেয়ে আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর (২০১৮ থেকে ২০২২ ডিসেম্বর) ধরে যারা নিবন্ধিত হয়েও কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি, তাদের আবেদন বাতিল হবে। তবে যেসব দল ২০১৮ সালে নিবন্ধিত হতে পারেনি, কিন্তু মেয়াদ থাকাকালীন কোনো সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ বা উপনির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকলে আবেদন যোগ্য বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। এক বছর করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে এ মেয়াদ পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। প্রথমে ২০০৮ সালে ১৩৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল এক বছর। এরপর ২০১১ সালে ১২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।এসব সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বৃদ্ধি করে। নবম সংসদ নির্বাচনে দেশীয় ৭৫টি সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি সংস্থা, ইসির নিবন্ধনও পায় ১১৯টি সংস্থা। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এ ছাড়া ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন বাংলাদেশি ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।