রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

চতুর্মুখী চাপ সামলানোর লক্ষ্য

বাজেট এবার ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার

মানিক মুনতাসির

চতুর্মুখী চাপ সামলানোর লক্ষ্য

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতা, ডলার সংকট, বৈশ্বিক মন্দা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের কৌশল কেমন হতে পারে এ নিয়ে প্রচন্ড চাপে রয়েছে অর্থ বিভাগ। আগামী বাজেটে এর বাইরে আরও অনেক রকমের চাপ থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এত সব চাপ সামলে স্মরণকালের অস্থির সময়ে স্বস্তির বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এমনিতেই বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে বিশাল আকারের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, আগামী বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। তবে অন্য এক সূত্র বলছে, এ আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকাও হতে পারে। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ইতোমধ্যে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে একনেক। আর এ বাজেটের মোট আয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া সুদ পরিশোধে ব্যয় ১ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে বাজেটের খসড়ায়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ধরা হয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদিকে জনসাধারণকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে চায় সরকার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পেতে সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াতে হচ্ছে দফায় দফায়। বাজেট ঘোষণার পরপরই হয়তো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে আবারও। এতে সব ধরনের পণ্যমূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মূল্যস্ফীতির চাপ প্রায় ২ অঙ্ক ছুঁইছুঁই করছে। অন্যদিকে প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান ডলার সংকট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘই হচ্ছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধও হচ্ছে দীর্ঘ। যদিও শুরুতে এ সংকট এতটা লম্বা হওয়ার মতো কোনো ইঙ্গিত ছিল না; যার ফলে বৈশ্বিক সংকটের আগুনে ঘি ঢালে এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এত সব সংকটের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সে হিসেবে আসছে বাজেটের প্রথম ছয় মাস বাস্তবায়ন করতে পারবে এ সরকার। পরবর্তী ছয় মাস বাস্তবায়ন করবে নতুন সরকার। এবারের বাজেট হবে দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম। জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ইতোমধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের জন্য অনুমোদিত হয়েছে ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসছে ২০২৩-২৪ বাজেটে মোটা দাগে কতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তা হলো, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কেননা দেশে গত কয়েক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। ভর্তুকির নিরাপদ সংস্থান করতে হবে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে স্থিতিশীল শক্তিশালী রিজার্ভ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে সরকারকে এ খাতে অবশ্যই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 এটাও এই নির্বাচনী বাজেটে সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। এজন্য ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে গেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছেন, করকাঠামোয় এমন কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনা হবে, যাতে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ে। এতে চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্যপ্যণের দাম কমানোর কার্যকর উদ্যোগের নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসছে বাজেটে নির্বাচনী কৌশল, ব্যবসা-বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সে অনুযায়ীই বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া কিছু শর্ত পালন করতে করকাঠামোতেও কিছু পরিবর্তন আনা হবে। এবারের বাজেটে বেশির ভাগ পরিকল্পনাই থাকবে নির্বাচনমুখী- এমনটাই মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

সর্বশেষ খবর