উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার শোধনক্ষমতাসম্পন্ন দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার। ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শোধনাগারটি আজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন প্রধানমন্ত্রী পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। রাজধানীর আফতাবনগরে বালু নদের তীরে প্রায় ৬২ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত অত্যাধুনিক এ শোধনাগারটি দেশের পয়ঃশোধন খাতে একটি মাইলফলক প্রকল্প। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীতে দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি (২০০০ মিলিয়ন) লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ পয়ঃ শোধন করতে সক্ষম এই দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের মাধ্যমে বর্তমানে মগবাজার, ওয়্যারলেস রোড, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, নয়াটোলা, মহানগর হাউজিং, উলন ও তৎসংলগ্ন এলাকা, কলাবাগান ও ধানমন্ডির (পূর্বাংশ), তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, নিকেতন, বাড্ডা, বনানী ও গুলশান (আংশিক) এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে।
বর্তমানে দাশেরকান্দি শোধনাগারে যেসব এলাকার পয়ঃ শোধন করা হচ্ছে, আগে সেসব এলাকার পয়োবর্জ্য সরাসরি রামপুরা খালের মাধ্যমে বালু নদে পড়ত এবং বালু নদের মাধ্যমে অন্যান্য নদী ও আশপাশের জলাশয়ের পানি দূষিত করত। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানান, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দূষণ কমায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২-এর ইনটেক পয়েন্ট শীতলক্ষ্যা নদীর সারুলিয়ায় পানির মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ফলে সায়েদাবাদে পানি শোধন ব্যয় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীকে পাঁচটি এলাকায় ভাগ করে পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুরে মোট পাঁচটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পয়ঃশোধনাগার) নির্মাণ করবে সরকার। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সবকটি পয়ঃশোধনাগার বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবা নিশ্চিত হবে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী বলেন, ‘এটি হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের একটি অংশ। দাশেরকান্দি প্রকল্পের তিনটি অংশ রয়েছে। একটি রামপুরা ব্রিজের পাশে হাতিরঝিল-সংলগ্ন লিফটিং সেশন। এখানে আটটি পাম্প বসানো আছে, যার মধ্যে ছয়টি সব সময় চালু থাকে। লিফটিং সেশন থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ডাবল লাইন (মোট ১০ কিলোমিটার) ট্র্যাঙ্ক স্যুয়ার লাইন রয়েছে। এর মাধ্যমে পয়োবর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পয়ঃশোধনের পর সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পরিশোধিত পরিষ্কার পানি বালু নদে ফেলা হয়। আর সলিড বর্জ্য পুড়িয়ে ফ্লাই অ্যাশ তৈরি করা হয়। এই প্লান্টে দৈনিক প্রায় ৪৫ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হবে, যা সিমেন্ট কারখানায় ফ্লাই অ্যাশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।