রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়কের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফেরাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রোদে পুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যান চলাচলের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। তারা রাতেও সমানতালে পালন করে যাচ্ছে এই দায়িত্ব। শিক্ষার্থীরা দলে দলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ কাজ করে যাচ্ছে। সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ও দেয়ালে যে লিখন তারা লিখেছিল তা মুছে রং তুলির আঁচড়ে সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তুলছে। এতে ঢাকার দেয়ালগুলো হয়ে উঠছে সুন্দর ও রঙিন। আর শিক্ষার্থীদের এসব কাজের প্রশংসা করছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে তাদের জন্য পানির বোতল ও খাবার নিয়ে এগিয়ে আসছেন। গত তিন দিন ধরেই ট্রাফিক পুলিশের অবর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের অনেককে গতকালও প্রধান সড়ক ও ফুটপাত পরিষ্কার করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু, বেলচা, গ্লাভস ও পলিব্যাগ হাতে সড়কে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করছিল। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজ পরিষ্কার করে শিক্ষার্থীরা। মিরপুর-১২ নম্বরে মেট্রোরেলের পিলারসহ বিভিন্ন দেয়ালে আন্দোলন চলাকালে যে স্লোগান ও দেয়াল লিখন তারা লিখেছিল রং তুলির আঁচড়ে তা মুছে দেয়। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই রং-তুলি জোগাড় করে দলে দলে ভাগ হয়ে এ কাজ করছিল। এদের অনেকে আবার দেয়ালে আন্দোলনে শহীদ হওয়া যুবক মুগ্ধর ‘পানি লাগবে পানি’ স্লোগানটি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলছিল। কেউ আবার ফুল-লতাপাতার নকশা দিয়ে মিরপুর-১২ এর সড়কটি ফুটিয়ে তুলছিল। এ সময় শিক্ষার্থীদের অনেককেই দীর্ঘসময় সড়কে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত দেখা যায়। কয়েকজন পিপাসা মেটাতে পানি পান করছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশপাশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের লোকজন এবং সাধারণ মানুষ তাদের জন্য পানির বোতল, জুস ও ফাস্ট ফুড নিয়ে আসছিলেন। সাধারণ মানুষ তাদের এ কাজের প্রশংসাও করছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল আনসার সদস্য ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।
মিরপুর-১০ নম্বরে শিক্ষার্থীদের লেন মেনে গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, সড়ক নির্দেশনার প্ল্যাকার্ড, বাঁশি ব্যবহার করতে দেখা যায়। কোনো গাড়িচালক লেন অমান্য করে আরেক লেনে যেতে চাইলে তারা গাড়ি থামিয়ে নিয়ম ভাঙার কারণ জানতে চাইছিল। আবার মোটরসাইকেলের যে আরোহীরা হেলমেট পরেননি তাদের গতিরোধ করে হেলমেট পরিধানের জন্য আহ্বান জানান। জানতে চাইলে কলেজশিক্ষার্থী মো. সুমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আজ তিন দিন ধরে সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছি। এ কাজে আমাদের নগরবাসীও সহযোগিতা করছেন। আজ আন্দোলনের সময় আমরা দেয়ালে যে লিখনগুলো লিখেছিলাম, সেগুলো নিজেরাই তুলে নতুন রঙে শহরের দেয়ালগুলো রাঙিয়ে দিচ্ছি।