দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে তীব্র যানজটে নাকাল সাধারণ পথচারীরা। আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাখেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে চান না। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীরা। রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। একইভাবে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন নকলনবিশরা।
দুপুর ২টায় নীলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ পূরণ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পথচারীদের। নীলক্ষেত মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশপাশে প্রচুর যানজট। যাত্রীরা বাস, রিকশা থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চান। ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত ছিল অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে এই কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা বিগত সাত বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য তারা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে চান না। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বলেও জানান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় তারা রাস্তায় নেমেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাকরিতে নিয়োগে ৩৫ বছর পর্যন্ত প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ এবং শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত প্রত্যাশীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি আমরা পালন করছি। গত ১২ বছর ধরে আমরা এই এক দাবিই জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না। আমরা বেকার, আমাদের কোনো চাকরি, আয় নেই। তবুও আমরা আমাদের দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছি। বারবার আন্দোলন করতে আমরা রাজপথে নামতে চাই না। তাই আজ আমরা ৩৫-এর প্রজ্ঞাপন নিয়েই বাড়ি ফিরব। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না।
প্রেস ক্লাবের সামনে সারা দেশে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ১৬ হাজার ২৪৬ জন এক্সট্রা-মোহরারদের (নকলনবিশ) চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহর (নকলনবিশ) অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটি। অবস্থান কর্মসূচিতে নকলনবিশরা বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মহান সংসদসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা নকলনবিশদের চাকরি জাতীয়করণের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পর বহু সরকারের পালাবাদল ঘটে। কিন্তু নকলনবিশদের খোঁজ কেউ রাখেনি। দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নকলনবিশ, মিডওয়াইফারি নার্সদেরও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদপ্তরের নকলনবিশদের বিষয়টি আজও সংশ্লিষ্ট দপ্তর আমলে নেয়নি। অবস্থান কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন।