ভাঙ্গায় শ্বশুর ও জামাইয়ের পক্ষে বিবদমান সংঘর্ষে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুজনের অবস্থা গুরুতর।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মুনসুরাবাদ গ্রামের ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে অন্তরা আক্তার কওমি মাদরাসায় পড়াশোনা করতেন। এ সময় মাদরাসার শিক্ষক জাহিদ মোল্লার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। জাহিদের আগে আরও দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে। বছর দেড়েক আগে জাহিদ মোল্লা অন্তরাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। অন্তরা হন জাহিদের তৃতীয় স্ত্রী। এ বিয়ে মেনে নেননি অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বর। জাহিদ মোল্লার বড় ভাই আলমগীর মোল্লা হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই বাবর আলী মাতুব্বর ইউপির সাবেক সদস্য। তারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষে বিরোধ রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষও হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে ইলিয়াস মাতুব্বরকে একা পেয়ে জাহিদ মোল্লার চাচাতো ভাই রাসেল মোল্লা কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমার ভাই জাহিদ তিন বিয়ে করেছে। আরেকটা বিয়ে করিয়ে এক হালি পূরণ করব।’ এ কথায় অপমান বোধ করে ইলিয়াস মাতুব্বর গ্রামে তার পক্ষের লোকজনকে বিষয়টি জানান। এ নিয়ে দুই পক্ষে তর্কবিতর্ক হয়। এরপর মঙ্গলবার বিকালে মুনসুরাবাদ বাজারে ইলিয়াস মাতুব্বরকে মারধর করে জাহিদের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুনরায় জামাই ও শ্বশুর পক্ষের লোকজন ঢাল, শড়কি, রামদা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। একজন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইলিয়াস মাতুব্বরের চাচাতো ভাই কামরুল মাতুব্বরের স্ত্রী চম্পা বেগম (৩২) ও ভাই রিয়াজ মাতুব্বরকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ইলিয়াস মাতুব্বরের আরেক ভাই ইকলাস মাতুব্বর (৩৫)।
ইকলাস মাতুব্বর বলেন, ‘জাহিদ মোল্লা আমার ভাতিজিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। এটা জাহিদের তৃতীয় বিয়ে। আমরা এ বিয়ে মেনে নিইনি। এ কারণে জাহিদের ভাইয়েরা আমাদের কটাক্ষ করে সব সময়। এ ইস্যুতে জাহিদ ও তার বড় ভাই ইউপি সদস্য আলমগীর মোল্লার নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা, মারধর ও কুপিয়ে জখম করে।’
জাহিদের বড় ভাই ও হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে আমার ভাইকে বিয়ে করে সুখে আছে। কিন্তু ইলিয়াস মাতুব্বর এ বিয়ে মেনে না নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিরোধ চালিয়ে আসছে। সামান্য বিষয় নিয়ে এ সংঘর্ষ ঘটেছে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারপিট ও সংঘর্ষ ঘটে। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’