খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হল। গতকাল সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার ও ইউজিসি প্রতিনিধি দল আলাদা কথা বলেছেন। ইউজিসির সুপারিশের পর শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
তবে অন্যায়ভাবে ভিসিকে অপসারণ করলে শিক্ষক সমিতি মানবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। কুয়েটের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ২ মের পরিবর্তে গতকাল বিকালে খোলা হয়। এর আগে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হওয়া অনশনে এ পর্যন্ত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাকি ২৩ জনকে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। একজন তার মায়ের অসুস্থতাজনিত কারণে বাড়ি ফিরে গেছেন। সবাই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুই রাত খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে ১৫ এপ্রিল হলের তালা ভেঙে সেখানে তারা প্রবেশ করেন। ফলে নতুন করে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের কাছে তামাশা মাত্র। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে তারা গতকাল প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও বিকালে ক্যাম্পাসে কফিন মিছিল বের করেন। এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার সকালে অনশনস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
যা বলল শিক্ষক সমিতি : ‘অন্যায়ভাবে’ ভিসিকে অপসারণ করলে তা মানবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, দোষী প্রমাণিত না হলেও চাপ প্রয়োগ করে ভিসির অপসারণ মেনে নেবে না শিক্ষক সমিতি। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি অনেক শিক্ষক আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।
সড়ক অবরোধ : কুয়েট ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে খুলনার জিরোপয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে খুবি শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে তারা জিরোপয়েন্ট মোড় অবরোধ করেন। এ সময় খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাবিতে অনশন, বিক্ষোভ চলছেই : বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চলমান রয়েছে আমরণ অনশন ও বিক্ষোভ। গতকাল বিকালে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও সাত কলেজের একদল শিক্ষার্থী।
মিছিলের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোসাদ্দিক আলি ইবনে মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার এক সাইনই যথেষ্ট এই দালাল সন্ত্রাসী ভিসিকে বহিষ্কার করার জন্য। কিন্তু সেটি তিনি না করে শিক্ষার্থীদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। আর একজন শিক্ষার্থীকেও অসুস্থ হতে দেখতে চাই না। আমরা হুঁশিয়ারি করে বলে দিতে চাই এখনো সময় আছে সসম্মানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করুন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা রাতে শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির আহ্বান করেন।
এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা।
জাবিতে আমরণ অনশন : জাবি প্রতিনিধি জানান, কুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া তলায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার ব্যানারে তারা এ অনশন শুরু করেন। সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ অনশন কর্মসূচি চলছিল।
ইবি প্রতিনিধি জানান, কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট। এ সময় তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।