মন্থনার জমিদারখ্যাত দেবী চৌধুরানীর স্মরণে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নাপাই চণ্ডীতে মেলা বসেছে। ২৪০ বছরের পুরোনো এ মেলা পরিণত হয়েছে উপজেলাবাসীর মিলন কেন্দ্রে। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সব বয়সি মানুষের মধ্যে।
জানা গেছে, ১৭৮৩ সালের বৈশাখের প্রথম বৃহস্পতিবার চণ্ডীপুর গ্রামে বিদ্রোহীদের গোপন আস্তানায় আক্রমণ চালায় ইংরেজ বাহিনী। এতে মন্থনার জমিদার জয়দুর্গা দেবী (দেবী চৌধুরাণী) প্রাণপণ যুদ্ধ করে নিহত হন। তার সঙ্গে নিহত হন ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায়সহ অসংখ্য ফকির সন্ন্যাসী। স্থানীয় লোকজন দেবী চৌধুরাণীকে চণ্ডিমা বলে ডাকতেন। তাই পরবর্তীতে এ গ্রামের নামকরণ হয় নাপাই চণ্ডি। দেবী চৌধুরানীর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রচলন শুরু হয় মেলার। প্রতি বৈশাখের বৃহস্পতিবার এ মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলার সহকারী ইজারাদার আশিক হোসেন বলেন, মন্থনার জমিদার দেবী চৌধুরানীকে স্মরণ রাখতে প্রতি বছর এ মেলা বসে। এবারের মেলায় শিশুদের জন্য নাগরদোলা, ইলেকট্রিক বোটসহ আকর্ষণীয় বিষয় রাখা হয়েছে। মেলায় প্রায় আড়াই শ দোকানপাট বসেছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলায় ঘুরতে আসা কয়েকজন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমে উঠেছে মেলা। এ মেলার বিশেষ আকর্ষণ গরম জিলাপি। আর শিশুদের জন্য খেলনা তো বৈশাখী মেলার প্রধান রসদ। মেলা ঘুরে দেখা যায়, ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে মাঠে দেবী চৌধুরানী লড়াই করেন সে মাঠে রয়েছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি দালান। জরাজীর্ণ দালানের উত্তরে লাগোয়া রয়েছে অন্য একটি দালানের ধ্বংসাবশেষ। জরাজীর্ণ দালানটিকে মসজিদ ও ধ্বংসাবশেষ দালানের অংশটিকে মন্দির বলে মনে করেন অনেকে। প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে মসজিদের দেয়ালে কোনো ফলক বা নামলিপি না থাকায় এটি কত সালে নির্মিত, তা জানা যায়নি। তবে স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে, দেবী চৌধুরানী ওই স্থানে নিহত হলেও এটি নির্মিত হয়েছে মোঘল আমলে।