তিন পার্বত্য জেলায় স্বায়ত্তশাসন চায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এ দাবি বাস্তবায়ন না করলে পার্বত্য জেলাগুলোতে নতুন করে সংকট সৃৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করেছে ইউপিডিএফ।
গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এ তথ্য জানান দলটির ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টার দিকে সংলাপ মুলতবি হয়। মুলতবি বৈঠক ১৫ মে বিকালে হওয়ার কথা রয়েছে। মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে দলটির চার সদস্য সুনয়ন চাকমা এবং সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা অংশ নেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টোর বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে মাইকেল চাকমা বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্বায়ত্তশাসন প্রস্তাবটি উপেক্ষা করায় পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ ছয় দশক ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। সংবিধানে সংস্কারে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করলে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হবে। তার এমন বক্তব্য হুমকি কি না জানতে চাইলে মাইকেল চাকমা বলেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা, হুমকি না। স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি কমিশন আশ্বস্ত করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেয়নি। তবে কমিশন বলেছে বাংলাদেশকে চারটি স্বায়ত্তশাসিত (চার প্রদেশে ভাগ) অঞ্চলে ভাগ করার প্রস্তাবনা এনেছে। এক্ষেত্রে আমাদের সেখানে সুযোগ আছে। এখন দেশে যদি চারটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হতে পারে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন নয়, পাঁচটা কেন নয়? পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার ক্ষেত্রে বাধা দেখি না।
ইউপিডিএফকে অনেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে- এ প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা বলেন, এসব বিষয়ে নানানরকম মত-পথ প্রচারণা আছে। আমরা কী ধরনের সংগঠন, কী নিয়ে রাজনীতি করি তা কাজের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। অন্যরা কী বলছে, কে কী বলছে এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ঘামানোর দরকার নেই। মাইকেল চাকমা বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব হওয়া অবশ্যই দরকার। একটা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে যেন ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন চায় গণফোরাম : বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় গণফোরাম। ওই নির্বাচিত সরকার সংবিধান সংশোধন করবে। এর বাইরে সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কারও নেই। গতকাল বৈঠক শেষে দলটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেন।
দলটি তাদের প্রস্তাবে জানায়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন করে আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় মতের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারার বিধান করার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। বিরোধী দলের সাংবিধানিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরোধী দলের মতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধানের প্রস্তাবনা বাতিল, স্বাধীনতার সনদ ও সংবিধান পুনঃলিখন ও গণপরিষদ নির্বাচন সমর্থন করে না দলটি।