প্রশাসনে পদোন্নতি-পদায়নে অদৃশ্য জটিলতা যেন কাটছেই না। সুরাহা হচ্ছে না জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগেরও; যার কারণে যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়েও চার মাসের বেশি ডিসির দায়িত্ব পালন করছেন ২১ কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রশাসনে উপসচিব, অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির আলোচনা হলেও সেটি হয়নি। পদোন্নতি নিয়ে হতাশা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তার মধ্যেও। সব মিলিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠনের পর বিষয়টির গতি আরও কমেছে বলেছেন জনপ্রশাসনসংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানান, ২০ মার্চ উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেয় সরকার। ডিসির দায়িত্ব পালন করা ২১ উপসচিবও যুগ্মসচিব হন। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন ডিসি দিতে পারেনি সরকার। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব এবং যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির। পদোন্নতি নিয়ে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) একাধিক বৈঠক করেছে। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি কোনো পদোন্নতিই। শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত পদোন্নতি না হলে হতাশার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এ পদোন্নতির গতি কমার পেছনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ঘাটতির কথাও বলেছেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট এক সূত্রমতে পদোন্নতির বিষয়টি চলতি মাসে সুরাহা হতে পারে।
পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদোন্নতি দিতে গড়িমসি করা, পদায়ন ঝুলিয়ে রাখা ভালো লক্ষণ নয়। প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দেয়। পাশাপাশি পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মনোবল ভেঙে অধৈর্য হয়ে যায়। এগুলো দ্রুত করা উচিত। বর্তমানের দুর্বল প্রশাসনে যদি অস্থিরতা দেখা দেয় তাহলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।’
ডিসি নিয়োগ বিলম্বের নেপথ্যে : চার মাসের বেশি সময়েও নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে না পারার কারণ সমন্বয়হীনতা। এ ছাড়া কয়েকটি কারণে ডিসি নিয়োগে তৈরি হয়েছে জটিলতা। একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, উপদেষ্টারা পছন্দের কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব করছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পছন্দের তালিকায় আছে কয়েকজনের নাম। জনপ্রশাসন সচিবসহ এসএসবির সদস্যদের দু-এক জনের নাম রয়েছে পছন্দের তালিকায়। রয়েছে জনপ্রশাসনসংক্রান্ত কমিটির পছন্দ-অপছন্দের প্রার্থী। সব মিলে তালিকা একটু লম্বা যা সমন্বয় করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত বছর ডিসি নিয়োগ নিয়ে নানান কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এবার যেন কোনো অভিযোগ না ওঠে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চলতি মাসে এটি হওয়ার আশা করছেন একাধিক কর্মকর্তা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখেই নতুন ডিসিদের মাঠে পাঠাবে সরকার। ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এখন যাঁরা ডিসি হিসেবে মাঠে যাবেন তাঁরাই থাকবেন নির্বাচনের দায়িত্বে। চলতি আগস্টে যুগ্মসচিবদের প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
পদোন্নতির আশায় তাকিয়ে দুই ব্যাচ : চলতি মাসে ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি হওয়ার বিষয়ে জানা গেছে। আর আগামী মাসে হতে পারে ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি। সর্বশেষ শনিবারও পদোন্নতি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে বৈঠক করেছে এসএসবি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে আছেন ৩৫৮ জন কর্মকর্তা। যুগ্মসচিবের ৫০২ পদে রয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১ হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৪০০ জন।