আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ধরে মাঠ প্রশাসনকে প্রস্তুত করে রেখেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মাঠ প্রশাসনে জেলা-উপজেলায় নতুন কর্মকর্তা দিতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এমনকি ব্যাপক রদবদল করতে চাইলে সেজন্য অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা করে রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চাহিদা মোতাবেক সারা দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনার পরিবর্তন করে দিতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এক দিনে যদি সব পরিবর্তনের মতো পরিস্থিতি বা চাহিদা থাকে সে প্রস্তুতিও রয়েছে জনপ্রশাসনের। মাঠ প্রশাসনের বদলি নিয়ে যাতে কোনো বিতর্ক না হয় সেজন্য এমন প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন।
যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকেই মাঠ প্রশাসন সাজানো শুরু করে সরকার। কারণ জাতীয় নির্বাচনে ডিসি রিটার্নিং অফিসার এবং ইউএনও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যদিও এবার ইসি থেকে কয়েকজনকে রিটার্নিং অফিসার করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ভোটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যে কোনো রদবদলের কাজটি ইসির অধীনে চলে যায়। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন জেলায় নতুন ডিসি ও এডিসি নিয়োগ দিচ্ছে। ইউএনওদের পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হচ্ছে। আগামী দু-এক মাসে আরও পরিবর্তন হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও কোনো কর্মকর্তার নামে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও পরিবর্তন করা হবে। বর্তমানে ১৭ এবং ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা আট বিভাগে কমিশনার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিসি হিসেবে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ায় তাদের মাঠ থেকে তুলে আনা হবে। নির্বাচনে ২৫, ২৭ এবং ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা নেতৃত্ব দেবেন। এর বাইরেও ২৯ ব্যাচকে ফিটলিস্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ব্যাচ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হবে। মাঠে ৩১, ৩৩ ও ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে কর্মরত। ৩৫ ব্যাচকে এডিসি হিসেবে দায়িত্ব দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনও হিসেবে ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন করে ৩৬তম ব্যাচকে মাঠে পাঠানো হয়েছে। যাদের দুই বছর ইউএনও হিসেবে পূর্ণ হয়েছে তাদের তুলে আনা হবে। সেখানে যারা ইউএনও হয়নি তাদের পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে ৩৭তম ব্যাচকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জনপ্রশাসনের কাজই হচ্ছে কর্মকর্তাদের নিয়োগ/পদায়ন করা। সে মোতাবেক নির্বাচনের আগে অতিরিক্ত কর্মকর্তা প্রস্তুত রাখা আছে। ফিটলিস্ট করা হয়েছে। জনপ্রশাসন তো নিয়মিত কাজ হিসেবে রদবদল করছে। কারও কাজে অসন্তুষ্ট থাকলে বা নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক তফসিলের পর কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে।
জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে ৬৪ জন ডিসি ও ৫ শতাধিক ইউএনও কাজ করছেন। নির্বাচনের সময়ে ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তফসিল ঘোষণার পর যদি ইসি সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তাদেরও তুলে নতুনভাবে দিতে বলে জনপ্রশাসনের সে সক্ষমতা আছে। এজন্য তালিকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে যারা ভালো করছেন তাদের না ওঠানোই ভালো হবে বলে মনে করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা বলেন, রাজনৈতিক সরকার থাকলে আগে থেকে মাঠ সাজায় নিজেদের সুবিধার জন্য। যেহেতু বর্তমানে রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই সবাই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকেই মনোযোগী হবেন। এদিকে চলতি মাসে সচিবালয়ে এক সভা শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সময় মাঠে থাকে সাধারণত দুই ধরনের প্রশাসন। একটি সিভিল আর অপরটি পুলিশ প্রশাসন। এ দুটোকে একসঙ্গে বলে মাঠ প্রশাসন। তাই নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করছি। মাঠ প্রশাসনের ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। পাশাপাশি প্রচলিত আইনের আওতায় এনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব।
কয়েক দিন ধরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতেও নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে দেড় লাখের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চলতি মাস থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।