রাজধানীর কলাবাগানে পরিবার নিয়ে ৫১ হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন নজরুল ইসলাম। ব্যাংকে আছে কয়েক কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। চলাফেরা করতেন দামি গাড়িতে। এমন আলিশান জীবনযাপনের পরও সম্পত্তির লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। স্ত্রী তাছলিমার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাছলিমা রাজি ছিলেন না। এ কারণে নজরুল তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন নিয়মিত। পুলিশের সন্দেহ এ কারণেই তাছলিমাকে হত্যা করা হতে পারে। ঘটনার পর থেকে তাছলিমার স্বামী নজরুল লাপাত্তা। পুলিশ জানিয়েছে, নজরুলকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাছলিমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে লাশ লুকিয়ে রাখা হয়। হত্যার পরই নজরুল লাপাত্তা বনে যান। এর আগে সন্তানদের তাদের ফুফুর বাসায় রেখে যান নজরুল।
গতকাল দুপুরে কলাবাগান প্রথম লেনের ২৪ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট বাসা। নিচ তলা পুরোটাই গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গা। রয়েছে একাধিক লিফট। দ্বিতীয় তলা থেকে ফ্ল্যাট বাসা। ষষ্ঠ তলায় ৬-বি নম্বর ফ্ল্যাটে সন্তানদের নিয়ে থাকতেন নজরুল-তাছলিমা দম্পতি। ফ্ল্যাটটি বর্তমানে তালাবদ্ধ। সেখানে উপস্থিত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই আতিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে সোমবার রাতেই মামলা (নম্বর-৩) করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি নিহতের স্বামী নজরুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি- পরকীয়ার সন্দেহ ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যার আসল রহস্য জানা যাবে। নিহতের ভাই নাঈম হোসেন বলেন, চার মাস আগে কলাবাগানের বাসায় ভাড়া উঠেছিল তারা। আমার বোন অন্য কারও সঙ্গে পালিয়ে গেছে, সোমবার দুপুরে এ কথা শোনার পর আমাদের সন্দেহ হয়, নজরুল ওরে কিছু করেছে। এরপর পুলিশ নিয়ে ওই বাসায় যাই। দরজায় তালা দেখি। পরে পুলিশ তালা ভাঙলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখি বাসা ফাঁকা। একপর্যায়ে ডিপ ফ্রিজ খুললে মাছ মাংসের প্যাকেট দেখা যায়। সেগুলো সরালে আমার বোনের জামাকাপড় দেখতে পাই। তখন বুঝতে পারি- তাছলিমাকে মেরে ওখানে রেখে পালিয়ে গেছে নজরুল। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, গাজীপুরের পুবাইলে আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ১০ কাঠা নিজের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিল নজরুল। প্রথমে ৪ কাঠা লিখে দিতে রাজি হই। এরপর এক কাঠা বাড়িয়ে ৫ কাঠা লিখে দিতে রাজি হই। এরপরও আমার বোনকে বাঁচতে দিল না। ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, স্বামীর সম্পত্তির লোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে তাছলিমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। আশা করি খুব দ্রুত নজরুলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। তখন আসল কারণ উঠে আসবে। কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের তিন কন্যা সন্তান। বড় দুই মেয়ে নাজনীন (১৯) ও নাজিফা (১২) বাবা মায়ের সঙ্গেই থাকত। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। মেয়ের কান্না সহ্য হতো না নজরুলের।
এ জন্য ছোট মেয়েকে তার নানা বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলে রাখা হতো। তিনি আরও বলেন, রবিবার রাতে মেয়েরা আলাদা রুমে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তাছলিমাকে হত্যা করা হয়। পরেরদিন সকালে নজরুল মেয়েদের বলে, তোমাদের মা আরেক লোকের সঙ্গে চলে গেছে। চলো তোমাদের ফুফুর বাসায় রেখে আসি। এরপর মেয়েদের তাদের ফুফুর বাসায় রেখে পালিয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নজরুল একসময় ব্যবসা করতেন। আদাবরে তার বাড়ি ছিল। সম্প্রতি ওই বাড়ি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাংকে ফিক্সট ডিপোজিট করে লভ্যাংশ দিয়ে সংসার চালাতেন।