অপরিকল্পিত নগরায়ণে রাজধানী ঢাকায় পাখি হারাচ্ছে তাদের আবাস, ঘটছে বিবর্তন। সবুজায়ন সংকটে বাসাবাড়ির বারান্দা, উঁচু ভবন, টাওয়ার, এসির শেড ইত্যাদি স্থানে খুঁজে নিচ্ছে অনিরাপদ আশ্রয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইকোসিস্টেমের ক্ষতি মানে দিন শেষে পুরো মানবসভ্যতাই সংকটে। প্রাণী সংরক্ষণে নিয়মিত কাজ করা বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আদনান আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্লভ পাখি চন্দনা শতবর্ষী গাছের বড় কোঠরে বাসা বাঁধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্থানে পাখিটি রয়েছে। এ ছাড়া এমন অনেক ক্ষেত্রেই পাখির জন্য আবাস অনিরাপদ হয়ে ওঠে যখন আমরা বৃক্ষনিধন করি। আবার চিলের বাসযোগ্য বড় গাছ খুব কম আছে ঢাকায়। এরা উঁচু ভবন, এসির নিচের শেডে ডিম পাড়ে আশ্রয় নেয়। সুতরাং পাখিদের অভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে, বিবর্তন ঘটছে তাদের আবাসসংকটে। যাদের গাছে বসবাস করার কথা তারা এখন দেয়ালের ফোকর, ভবনের ফাটল এমন বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। আদনান আজাদ আরও বলেন, ঘাসবনের পাখিরা সবচেয়ে অসহায় নগরায়নের কারণে। উত্তরা দিয়াবাড়ি এবং আফতাবনগরে ঘাসবন ছাড়া আর কোথাও নেই। শীতে সাইবেরিয়া ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা আসবে। এখানে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে ফলে ঘাসবনের পাখিদের জন্য তা অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ঢাকা শহর শুধু পাখিদের জন্য নয় মানুষের জন্যও অনিরাপদ। আমরা জলাশয় সবুজায়ন সবকিছু যেভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছি তাতে করে বন কিংবা জলাশয় কোনোটাতেই পাখির থাকার পরিবেশ নেই। এখন আমাদের কাশবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের কারণে। ঢাকার পরিবেশে এবং আকাশ ছোট হয়ে আসছে পাখিদের জন্য।’
রাজধানীতে সাতটির মতো বড় উদ্যান রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের আয়তন ২০৮ একর, জিয়া উদ্যানের ৭৪ একর, রমনা পার্কের ৬৯ একর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৬৮ একর, ওসমানী উদ্যানের আয়তন ২৩ একর, বাহাদুর শাহ পার্কের প্রায় ২৪ একর ও বলধা গার্ডেনের ৩ দশমিক ৩৮ একর। এ ছাড়া গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক, লেকপার্ক, বারিধারার লেকভিউ পার্কসহ আরও কিছু পার্ক রয়েছে ঢাকাজুড়ে। এ স্থানগুলো পাখির আবাস ও চারণভূমি হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু পার্ক ও উদ্যান ধ্বংসের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। প্রাণী সংরক্ষণ এবং অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী সুরাইয়া বানিন বলেন, ‘পার্ক ধ্বংস এবং নগরের সবুজ এলাকা কমে যাওয়ায় পাখিদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, সবুজ অঞ্চল ধ্বংস এবং নদী ও বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে পাখিদের বাসস্থান ও খাবার সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রাকৃতিক খাবারের উৎস কমে যাওয়ায় পাখিরা খাদ্যসংকটে ভুগছে। এভাবে চলতে থাকলে ইকোসিস্টেম হুমকির মুখে পড়বে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের সভ্যতায়।’