বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কেউ যদি মনে করে ভারতে বসে এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নরেন্দ্র মোদিদের মাধ্যমে তাদের স্বার্থের রুটম্যাপ বাস্তবায়ন করবে, তাহলে তাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালে যাদের নেতৃত্বে ও রক্তের বিনিময়ে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল তাদেরও কিন্তু এ দেশে ঠাঁই হয় নাই। শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদি আশ্রয় দিয়েছেন, আমাদের আপত্তি নাই। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। প্রয়োজনে শেখ হাসিনাসহ তার পুরো পরিবার ভারতে নির্বাসিত হোক, আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করলে এদেশের ১৮ কোটি মানুষ যুদ্ধের ময়দানে নামবে।
তিনি আরও বলেন,২০২৪ সালে নব্য ফ্যাসিবাদের জায়গা এ বাংলাদেশে হয় নাই। ভবিষ্যতেও যদি কেউ এদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তাহলে দেশের আলেম সমাজ, ছাত্রসমাজ সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এমন দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে যে, বাংলাদেশের মানুষ আর কোনও দিন এ দেশে ফ্যাসিবাদ আসতে দেবে না।
বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের হাবিবপুর ঈদগাঁহ মাঠে খেলাফত মজলিস সোনারগাঁ শাখার আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের রূহের মাহফিরাত কামনা ও প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাস করতে হলে, রাজনীতি করতে হলে এ দেশের মানুষের পালস বুঝতে হবে, আবেগ বুঝতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে দীর্ঘ দিন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে কিন্তু চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যাদের অত্যাচার অবিচার মাত্রাতিরিক্ত ছিল, তাদের বিষয়ে মহানবী ঘোষণা করেছিলেন- তাদের কোন ক্ষমা নেই। সোনারগাঁয়ের শত শত মানুষের নিপীড়নের জন্য ব্ল্যাক লিস্ট করতে হবে।
সোনারগাঁয়ে অপকর্মের জন্য চিহিৃত কিছু মানুষ দায়ী দাবি করে মামুনুল হক বলেন, সে সকল চিহিৃতদের সোনারগাঁয়ে চিরদিনের জন্যে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।
বিগত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জালিম সরকার আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, ওই জালিম সরকার ১৬টি বছর দেশের মানুষকে সবদিক দিয়ে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। অনেকে ধারণাই করে নিয়েছিল এ জালিম সরকারকে হটানোর মতো, অপসারণের মতো কোনও শক্তি নেই।
তিনি বলেন, ওই জালিম সরকারের লক্ষ্য ছিল, হাজার-লাখ মানুষকেও যদি হত্যা করতে হয়, তারা করবে। তারপরও তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। কিন্তু যখন তাদের পাপের বোঝা পরিপূর্ণ হয়েছে তখন ঠিকই আল্লাহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দিয়ে তাদের অপসারণ করিয়েছেন।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ পুনরায় যে স্বাধীন হয়েছে, সে স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা, এ স্বাধীনতা নব্য আত্মবিশ্বাসিদের স্বাধীনতা, এ স্বাধীনতা জিম্মিকারীদের নীল নকশা ভণ্ডুল করার স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, এ স্বাধীনতার পিছনে অনেক সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে। অনেক মা-বোনের চোখের অশ্রু রয়েছে। রয়েছে অনেক ভাইয়ের রক্ত। যে সকল ব্যক্তি এ সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাদের অবশ্যই জাতি সারাজীবন মনে রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
মানুষ তাদের অনেক কর্মফল পৃথিবীতেই পেয়ে যাবেন যা হাদিসে আছে জানিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের কর্মফল দেশের মানুষ দেখেছে, পুরো পৃথিবী দেখেছে। তাদের কর্মদোষে শেখ মুজিবর রহমানের মুর্তি ভেঙে তার ওপর প্রস্রাব করেছে নির্যাতিত মানুষ।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণের যে টাকা দিয়ে হেলিকপ্টার কিনেছিলেন দেশের মানুষের সেবা করার জন্যে, ছাত্র আন্দোলনের সময় সেই হেলিকপ্টার দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে পাখির মতো মানুষ মেরেছে।
সভায় খেলাফত মজলিস সোনারগাঁ শাখার সভাপতি হাফেজ ক্বারী মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন খান, সংগঠনটির সোনারগাঁ থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/একেএ