পণ্ডিত মশাই বিয়ের জন্য মন্ত্রপাঠ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগত অতিথিরা পর্যায়ক্রমে খানাপিনা সেরে বিয়ে মণ্ডপের কাছে যার যার মতো আসন নিচ্ছেন। পাত্রপক্ষ বেশকিছুক্ষণ আগেই হাজির হয়েছে। বরযাত্রী ৪০জন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, ঠিক এমন সময় পাত্রপক্ষের মুরুব্বীরা বের করলেন একখানা কাগজ। ঠিক কাগজ নয়, ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক থেকে প্রত্যায়িত করে আনা একটি দাবিনামা। ওই দাবিনামায় সই করলে তারপরই হবে বিয়ে। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে পাত্রী নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন এমন ছেলেকে তিনিই বিয়ে করবেন না।
গত শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার হাসখালি থানার গাজনা মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পাত্রের নাম সনাতন শর্মা (৩০)। তিনি পেশায় মুহরি। এছাড়া তার একটি সেলুন রয়েছে। তার বাড়ি নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন পাত্রপক্ষ তাদের সঙ্গে আনা লিখিত ১৪ দফা দাবি পাত্রীপক্ষের সামনে পেশ করে এতে সই করতে বলে। দাবিনামায় রয়েছে, বিয়ের পর স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ তোলা যাবে না, বনিবনা না হলে স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকবে কিন্তু মামলা করতে পারবে না, বিয়ের পর পাত্রীর (১৬ বছর বয়সী) কোনো কারণে মৃত্যু হলে এ নিয়ে পাত্রপক্ষকে দোষারোপ করা যাবে না ইত্যাদি।
পাত্রীপক্ষের তরফ থেকে অনুনয় করে জানানো হয়, এ দাবিনামা তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। বিয়ের লগ্ন চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবে পাত্রপক্ষ তাদের অবস্থানে অনড় থাকে। একপর্যায়ে পাত্রী ঘোষণা দেন, ওই পাত্রকে তিনি বিয়ে করবেন না। পাত্রীর বাবা বিশ্বনাথ প্রামাণিক ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। যৌতুক বাবদ পাত্রপক্ষকে দেওয়া ২৫ হাজার ও বিয়ের খরচ বাবদ ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেন তিনি। এই দাবিতে গ্রামবাসীও একজোট হয়। পাত্রপক্ষ এতে অস্বীকৃতি জানালে শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাত্রসহ তাদের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে পাত্রীপক্ষ থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে পাত্রকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
বিডি-প্রতিদিন/০২ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ