সংঘর্ষের জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর আজ সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ছেড়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বাকি শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে (শিক্ষকদের আবাসিক ভবন) ভাঙচুরের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক হওয়া সজীব সরকার ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে।
রবিবার আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় হামলায় অন্তত ১২ জন বুলেটবিদ্ধসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং আজ সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামানকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার থেকে তারা ক্যাম্পাসে ধর্মঘট শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে শনিবার বর্ধিত ফি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং সন্ধ্যাকালীন কোর্স বাতিল না করায় আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গতকাল হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত আট সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আশ্রয় নেয়। অন্যদের পিস্তল উঁচিয়ে ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে ধাওয়া করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ বলেন, ছাত্রলীগের মিছিলের পেছনের দিকে সমাবেশ থেকে ককটেল হামলা চালানো হয়। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলি করার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অস্ত্র ব্যবহার করেননি।
বেলা ২টার দিকে জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।
জুবেরি ভবনে হামলা-ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জুবেরি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষকেরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আট দফা দাবি জানান। এর মধ্যে আছে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকের পদত্যাগ এবং হামলার জন্য দায়ীদের বিচার।