হতাশার কেন্দ্রে যে দলিলটি রয়েছে তার নাম জুলাই সনদ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এই খসড়াকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক, দ্বন্দ এমনকি দলভেদে তীব্র ভাষাগত সংঘাত। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে এত দ্রুত বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে সেটা কেউ ভাবেনি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, সংস্কারের প্রতিশ্রুতি, জাতীয় ঐকমত্য আহ্বান সব মিলিয়ে একটা নতুন শুরুর অনুভব জন্ম নিয়েছিল।
এক বছর না যেতেই সেই অনুভব এক ধরনের বিভ্রান্তি আর হতাশায় পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তাতে তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, একদলের মতে এই সনদ সংবিধানে স্থান পেলে ’৭১-এর মত আরেকটি ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি হবে। আরেক দল বলছে এই সনদ অতিমাত্রায় প্রতীকী, আইনগত বৈধতা নেই এবং এটাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিলে ভবিষ্যতে নানা ধরনের বিপত্তি তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী তরুণেরা এই সময়ের রাজনৈতিক বিভাজনের কেন্দ্রবিন্দুতে। আন্দোলন সফল করার পর তারা এখন দল গঠন করেছে। নানা জেলায় সমাবেশ করছে, তাদের কেউ কেউ ছাত্র সংসদের নির্বাচনেও অংশ নিতে চাইছে। বাস্তবতার চাপে পড়ে তারা দিগভ্রান্ত।
গোপালগঞ্জের মত স্পর্শকাতর জায়গায় তারা পদযাত্রা করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকারণে উত্তেজিত করেছে। পাঁচজন নিহত হয়েছেন, সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামতে হয়েছে। এমন অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক উত্তেজনা আন্দোলনের নৈতিক উচ্চতা কমিয়ে দিয়েছে।
জিল্লুর বলেন, তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ভবিষ্যৎ কৌশলের অভাব। আন্দোলনের আবেগে জনগণকে উজ্জীবিত করা যায় কিন্তু গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা যায় না।
সেটার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, সংলাপ, দায়িত্বশীলতা ও বাস্তব বোধ। কিন্তু এনসিপির অনেক নেতা এখনো ছাত্রনেতা স্টাইলে কথা বলছেন, আবেগে ভাসছেন। এতে মনে হয় তারা এখনো রাজপথ থেকে মঞ্চে উঠতে প্রস্তুত নয়।
জিল্লুর আরো বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আন্দোলনের ভাষা আর শাসনের ভাষার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। স্লোগান আর সংবিধান এক নয়। যারা ক্ষমতার জন্য প্রস্তুত হতে চায় তাদের ইতিহাস, রাজনীতি, আইন ও বাস্তবতা এই চারটি সম্মেলন ঘটাতে হবে। না হলে এই সরকার যাবে আরেকটা আসবে। কিন্তু জনগণের হতাশা বদলাবে না। এই অবস্থায় এনসিপি কিংবা জুলাই আন্দোলনের অন্য নেতৃত্ব যদি আত্মসমালোচনার শক্তি অর্জন না করে তাহলে তারা দ্রুত জনআস্থা হারাবে। ইতিমধ্যে হারাতে বসেছেও তারা। ইতিহাস জানে যে আন্দোলনের আস্থা হারায় সে আর ফিরে আসে না। তখন আর কেউ বলবে না এরা একদিন নেতৃত্ব দিয়েছিল।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন