শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের ত্রিমুখী আঁতাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা লাভজনক পণ্যে পরিণত হয়েছে। এক থেকে তিন কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি পাওয়া যায়। ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা দিলেই পাওয়া যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ। উপহার বা নগদ অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস করা যায় ও শিক্ষকরা নম্বর বাড়িয়ে দেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়৷
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মো: রফিক হাসান ও উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নীনা শামসুন নাহার।
তারা জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দৈবচয়নভিত্তিতে ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ অনুমোদনের জন্য অবৈধ অর্থ লেনদেন হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পরিদর্শনে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, অনুষদ অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ৩০ হাজার, বিভাগ অনুমোদনের জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার, পাঠ্যক্রম অনুমোদনের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লেনদেন হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশের আঁতাতের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে অনেকে একে মুনাফা অর্জনের উপায় হিসেবে দেখছেন। ফলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষা এক ধরনের বাণিজ্যিক পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে টিআইবির পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৬ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।