চ্যানেল আইয়ের কাফেলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে মাহমুদা নামে এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ওই নারীকে পুলিশি হেফাজতে আনা হয়। তবে এই মাহমুদা সেই 'রহস্যময়' নারী কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফারুকী খুন হওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে হঠাৎ করে এক নারী ফারুকীর বাসায় যান। গল্পের ছলে বাসার বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ ঐ নারীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মাহমুদা নামে ওই নারীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া না গেলে তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হবে।
এই নারীই হত্যাকাণ্ডের আগে ফারুকীর বাসায় গিয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে এই নারীই হত্যাকাণ্ডের আগে ফারুকীর বাসায় গিয়েছিলেন। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আটক করে তাকে ঢাকায় নিয়ে আাসা হচ্ছে। তবে ফারুকীর বাসায় যে গিয়েছিল সে নিজেকে আসমা বলে পরিচয় দেন। মাহমুদার বক্তেব্যর মধ্যেও অসংলগ্নতা খুঁজে পাওয়া যায় বলে জানান ডিসি।
হত্যাকান্ডের পর ফারুকীর দ্বিতীয় স্ত্রী লু্বনা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ফারুকী খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তার বাসায় আসমা নামে “রহস্যময়ী” এক মহিলা এসেছিলেন। কয়েকদিন আগেও ওই মহিলা ফারুকীর বাসায় আসেন। কিন্তু খুনের আগের দিন ফারুকীর সাথে তার ফোনে কথা হয়।দীর্ঘদিন ধরেই ওই মহিলা ফারুকীর সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন।
এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন ফারুকীর স্ত্রী লুবনা। ৪০-৫০ বছর বয়সী ওই মহিলা হত্যাকাণ্ডের দিন বিকাল ৪টায় ফারুকীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। তার আগে তিনি ফারুকীকে ফোন করে তার বাসার ঠিকানা নেন।
সাক্ষাতের সময় ওই মহিলার পরনে ছিল ময়লা একটি বোরখা। হাতে ছিল লম্বা একটি ব্যাগ। তিনি নিজেকে আসমা হিসেবে পরিচয় দেন। ঘাতকের থাবায় নিহত ইসলামী নেতা মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীর দ্বিতীয় স্ত্রী লুবনা বলেন, আসমা নিজেকে সুদূর বরিশাল থেকে ফারুকীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আসমা আমাদের ঘরে ঢোকেন এবং সাবধানে পা ফেলতে থাকেন। আসমা আমার স্বামীর ঘরে প্রবেশ করে বলেন, আমি সুন্দরবন থেকে আপনাকে দেখতে এসেছি। এ সময় তিনি ক্ষুধার্ত বলে জানান।
লুবনা বলেন, আমি যখন তার জন্য খাবার তৈরি করতে রান্নাঘরে যাই। একটু পরই মহিলা রান্না ঘরে ঢুকে পড়েন। তখন তাকে আমি বলি খাবার প্রস্তুত হচ্ছে আপনি বসেন। কিন্তু আসমা নামের ওই মহিলা সেদিকে খেয়াল না করে আমাদের পরিবার সম্পর্কে নানা খোঁজখবর নিতে থাকেন। প্রতিটি কক্ষ তিনি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন।
পরে আসমা ফারুকীকে বলেন, তিনি গভীর সম্যায় পড়েছেন, তাকে দেখাশুনা করার কেউ নেই। তার ছেলে একটা ইঞ্জিনিয়ার, মোটা টাকা বেতন পান অথচ তাকে কোনো টাকা-পয়সা দেয়া না বলে জানান। আসমা নিজেকে ধার্মিক বলে পরিচয় দেন। অথচ মাগরিবের নামাজের সময় পার হলেও নামাজ পড়েননি।
লুবনা বলেন, একপর্যায়ে আসমা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। মহিলার এই অসংলগ্ন ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য শুনে আমি বিস্মিত হই। এ সময় আসমা রাত্রিযাপন করার জন্যও স্বামীর কাছে বায়না করেন। কিন্তু ফারুকী তাতে সায় না দিয়ে ছেলেকে বলেন, মহিলাকে ফার্মগেটে নামিয়ে দিয়ে আস, যাতে বাস ধরতে পারে। কিন্তু মহিলা বলেন, এ সময় কোনো বাস পাওয়া যাবে না। একথা শুনে ফারুকী তাকে কিছু টাকা দিতে চান। কিন্তু ওই মহিলা টাকা নিতে অস্বীকার করে জানায় তার কাছে তিন হাজার টাকা আছে।
লুবনা আরও বলেন, ঘরে ঢুকে আসমা অনবরত কথা বলেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাসা ত্যাগ করার সময় পুরোনো বোরখা রেখে একটি নতুন বোরখা ব্যাগ থেকে বের করে পরেন।
লুবনা বলেন, আসমা ঘর ছাড়ার পনের মিনিট পর ২৫ বছর বয়সী দুই যুবক বাসায় আসেন এবং হজে যাবার কথা বলে ফারুকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। এদের মধ্যে একজনের মাথায় টুপি ছিল ও ছিল হালকা দাড়ি। এই লোকটি আগের দিনেও আমাদের বাসায় আসে। ওই দুই যুবক ফারুকীর সাথে ১৫-২০ মিনিট কথা বলে আবার আসবে বলে বিদায় নেয়।
লুবনা জানায়, এরপর রাত ৯টার দিকে তারা কয়েকজন ফের বাসায় আসে।এর দুই তিন মিনিট পরেই আরও কয়েকজন বাসায় ঢোকে।এ সময় আমরা সবাই বাসায় ছিলাম।তারা ছিল অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত। তারা আমাদের সবাইকে বেঁধে ফারুকীকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।