গত দুই বছরে আতঙ্কজনকভাবে গুম বৃদ্ধির ঘটনা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে মোকাবেলা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে নির্যাতন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার ক্রমবর্ধমান তৎপরতার ইতি ঘটাতে হবে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ফোনে হুমকি দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা। সরকারবিরোধী সমালোচকদের গণমাধ্যমে যেন স্থান দেয়া না হয় সেজন্যই এই চাপ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বাংলাদেশ : ডিস্টারবিং ইনক্রিস ইন ডিসাপিয়ারেন্সেস, ক্যাম্পডাউন অন প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে। এতে চলতি বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ মানবাধিকারের যেসব ঘটনা মোকাবেলা করছে তা তুলে ধরা হয়। জরুরি করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে কিছু সুপারিশ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশবিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা ও অন্যান্য উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু যখন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর যেমন নির্যাতন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার মতো বিষয় আসে তখন তার সঙ্গে ওই উন্নয়ন খাপ খায় না। আমরা একটি প্রবণতা প্রামাণ্য আকারে ধরতে পেরেছি। তা হলো, অব্যাহত গুমের জন্য দায়ী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও তারা তা অস্বীকার করে। সরকারের উচিত তার নিজস্ব বাহিনীর এ বিষয়ে দীর্ঘ ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং এসব ঘটনায় জবাবদিহিতার যে ঘাটতি আছে তা পুরোপুরি তুলে দেয়া।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। ২০ জন মানুষের মধ্যে ৯ জনকে পাওয়া গেছে মৃত। আটক রাখার দুই মাস পরে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন ছয়জন। পাঁচজনের খোঁজ আজও মেলেনি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এতে টার্গেট করা হয়েছে বিরোধী দলগুলোর বিশিষ্ট সদস্যদের।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যদর্শীরা পুলিশ বা র্যাবের বিশেষ বাহিনীর এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু এসব অভিযোগে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভূমিকার কোনো জবাবদিহিতা নেই। এর মধ্যে চলতি বছর এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণ ও হত্যার একটি ঘটনায় র্যাবের কর্মকর্তাদের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ওই খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন র্যাব কর্মকর্তাকে আটক করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।
আব্বাস ফয়েজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য লিটমাস টেস্ট। যেহেতু র্যাবের সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তা ইতিবাচক।