৩২টি মন্ত্রণালয় ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারলো না, ২৩টি মন্ত্রণালয় বাড়তি খরচ করল, একটি মন্ত্রণালয় কোনো টাকাই খরচ করতো পারলো না, কারা সেই সৌভাগ্যবান মন্ত্রী, কোন কোন মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারলো না, কেনো পারল না, কিছুই জানালেন না- টাকা খরচ করে সম্পূরক বাজেট পাস করাতে এসেছেন? আমি তো এই টাকা অথরাইজড করি নাই। এখন খরচ করে এসে বলছেন ভোট দেন। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নাই।’ আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের (২০১৪-১৫) ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সম্পূরক বাজেট পাস করার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
সুরঞ্জিত বলেন, ‘যদি আপনি মনেই করেন যা খুশি লেইখা নিয়া যাও আর কাউরে কিছু বলার দরকার নাই তাহলে দয়া কইরা এই সম্পূরক বাজেট বই ছাপানোর দরকার নাই। এভাবে পৃথিবীর কোথাও নাই।’ এসময় তিনি সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করে বলেন, ‘বাজেট, সম্পূরক বাজেট সংসদীয় কমিটির বিবেচনায় আনা দরকার। অন্যান্য দেশে সম্পূরক বাজেট সংসদে আসার আগে অর্থ কমিটি বা অনুমোদন কমিটিতে দেয়।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সুরঞ্জিত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আছেন, তিনি অনেক সংস্কার করছেন, আশা করছি এটাও করবেন। তাহলে আর এই সমস্যা থাকবে না।’
প্রবীণ এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, ‘আর সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে আপনি ৬৩ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, দপ্তরের খরচের হিসাব দিয়েছেন। এইটা তো এই পার্লামেন্টে ভোট ছাড়া পাস হবে না? আমি কিসে ভোট দিব? ভোট দিতে গেলে আপনাকে বলতে হবে এই এই মন্ত্রী, এই এই মন্ত্রণালয় এই টাকাটা খরচা করতে পারে নাই। কেন পারে নাই, এই কথাটাও আপনাকে বলতে হবে। এই কথাটাই আপনার আর্টিক্যাল ৯১-এ বলেছে। সংবিধানের ৮৭-৯১ অনুচ্ছেদে সম্পূরক বাজেট কিভাবে হবে বলা আছে। ৯১ অনুচ্ছেদে সম্পষ্ট বলা আছে, কোনটায় কেন কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো তা উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু আপনি তো এ টাকা খরচ করে এসেছেন।’
‘রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ওয়ান হান্ডের্ড ইয়ার হিস্ট্রি শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ২২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রপতি ভবনের ইতিহাস রাখতে হবে ভালো কথা। এইটা যে একেবারে সাপ্লিমেন্টারী বাজেট কইরে করতে হবে। হোয়াট ইজ দ্য আর্জেন্সি? এইটা তো সাপ্লিমেন্টারী বাজেটের বিষয় নয়। ’
প্রবীণ এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সাপ্লিমেন্টারী বাজেট রাখা হয় এই কারণে যে আমার একটা প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে, আমার কিছু টাকা প্রয়োজন আমি খরচা করবো ওই সময়। কিন্তু যেটার আর্জেন্সি নাই, যেটা কালকেও করা যেতে পারে। এইবারের বাজেটে করেন কোনো অসুবিধা তো নাই। এই কুদরতি কারবার দিয়ে তো চলবে না। পরিকল্পনা বিভাগ। পরিকল্পনা বিভাগকে আমার অনেক টাকা দিতে হয়েছে। ব্যাখ্যামূলক স্মরক লিখছেন- একটি নতুন প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায়, দুটি চলমান প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়ন সহযোগিতা খাতে এই অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। এটার কোন মানে হইলো? একটি শব্দেরও কোনো অর্থ নেই। এই যে বললেন একটি নতুন প্রকল্প, কিসের নতুন প্রকল্প? কি প্রকল্পটার নাম কি? কোথাকার প্রকল্প? এটা বলবেন তো যে এই প্রকল্প। কয় টাকার প্রকল্প?। ’ সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আরো বলেন, ‘বাজেটের টাকা খরচের ব্যাপারে আমি বিরোধিতা করছি না। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা কোথায় খরচ করলো, এগুলো আর্থিক বিবরণীতে থাকা উচিত ছিল।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ভোট করতে গেলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীকে অবশ্যই দে উইল মেক টু একাউন্টিবিলিটি অব দিজ পার্লামেন্ট। কারণ একাউন্টিবিলিটি অব দ্য ক্যাবিনেট অ্যান্ড পার্লামেন্ট ইজ কালেকটিভ। শুধু প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দিলে সব হবে না। সুতরাং আপনি কে? কেন? কতটাকা খরচা করছেন? কিভাবে করছেন? বলতে হবে।'
বিডি-প্রতিদিন/৯ জুন ২০১৫/শরীফ