চার দফায় সময় বাড়িয়ে এবং গতকাল দিনভর নাটকের পর অবশেষে আজ রাত ১২টা ২৩ মিনিটে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
www.xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটে মনোনীতদের তালিকা পাওয়া যাবে। শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান ফলাফল প্রকাশের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ফলাফল ইতিমধ্যে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফলাফল জানতে সবাই একসঙ্গে ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, তালিকা প্রকাশে দেরি হওয়ায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। ভর্তি কার্যক্রম চলবে আজ সোমবার থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত। তবে ক্লাস শুরুর সময় ১ জুলাই ঠিক রাখা হয়েছে। গত রবিবার দুপুরে আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেছিলেন, ক্লাস শুরু হবে ২ জুলাই। এর আগের সময় অনুযায়ী ২৭ জুন থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করার কথা ছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই একসঙ্গে সব কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কাজ অনলাইনে করতে গিয়ে এবার বিপাকে পড়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। প্রায় সাড়ে ১১ লাখ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে কোন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে, সেই তালিকা করতে গিয়ে বোর্ডকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজিও (আইআইসিটি) হিমশিম খায়।
বোর্ডের পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। এরপর চার দফায় সময় পেছানো হয়। এদিকে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে ‘অনলাইন স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম’ প্রক্রিয়ার কবলে গভীর সংকটে পড়ে দেশের ১২ লাখ ভর্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থী। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তাদের অভিভাবকরা।
জানা যায়, সার্ভারের সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে একসঙ্গে দেশের সব কলেজে স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তির এ পদ্ধতি চালু করায় হয়রানির কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ধারণার চেয়ে অধিক আবেদনকারী, কারিগরি জটিলতা ও সারা দেশের ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে কর্মকর্তাদের যথাযথ ধারণা না থাকার কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ। শনিবার পর্যন্ত তিন ধাপে ফল প্রকাশে হোঁচট খাওয়ার পর প্রকাশ হয় ফল। শনিবার পর্যন্ত তিন ধাপে ফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ার পর শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম বুয়েট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদকে এ সমস্যা সমাধানে অনুরোধ করেন। ড. কায়কোবাদও এ সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ও কলেজ পরিদর্শক আসফাকুস সালেহীন জানিয়েছিলেন, রবিবারই এ ফল প্রকাশ করা হবে। তবে বোর্ডের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। রবিবার সকালে মন্ত্রণালয়ে এক সভার পর শিক্ষা সচিব বুয়েট অধ্যাপকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, আজ এ ফল প্রকাশ করা হবে। কিন্তু নানা কারিগরি ত্রুটির কারণে শেষ পর্যন্ত এ ফল প্রকাশ করতে পারেনি বোর্ড।জানা গেছে, তিন শতাধিক আসন থাকা কলেজে এ স্মার্ট সিস্টেম প্রয়োগের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাদের কথা চিন্তা করেই অনলাইনে আবেদনের জন্য বুয়েটের সহায়তায় সার্ভার তৈরি করা হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করাকালীন বুয়েট টিম ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সব কলেজেই এ পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এতেই বাধে বিপত্তি। এক লাখ ৮০ হাজারের উপযোগী সার্ভারকে ১২ লাখ শিক্ষার্থীর ডাটা আপলোডের চেষ্টা করা হয়। ফলে সার্ভার আর লোড নিতে পারেনি।গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের কাছে ফল প্রকাশের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো বলা যাচ্ছে না। দেখা যাক কী হয়। নানা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কিছু বলেননি। তবে শুধু এটুকু বলেছেন, ‘আমাদের ভরসা এক্সপার্ট টেকনিক্যাল টিমের ওপর। তারা সর্বোচ্চভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের চেষ্টা করছেন।’ তিনি জানান, ফল প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হলেও কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তাদের ভর্তির ও ক্লাস শুরুর তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, প্রথমবার অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার পর থেকে টেলিটক মোবাইল ফোনে আবেদনের টাকা পাঠানো, শিক্ষার্থীর আবেদন অন্য আরেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করে ফেলাসহ নানা রকম প্রতারণা, সর্বশেষ ফল প্রকাশে বিলম্বসহ প্রতিটি ধাপেই চলছে রীতিমতো নৈরাজ্য। এতে নাকাল শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।৩০ মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন উত্তীর্ণ হন, যারা এখন এই ভর্তি ফলের অপেক্ষায় আছেন। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরাও এবার একাদশে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। এবার কলেজে ভর্তি হতে ৬ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা।ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। আর ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ জুন,২০১৫/মাহবুব