বাংলাদেশের ফুটবলে এখন শুধু মেয়েদেরই জয়গান। জাতীয় ও অনূর্ধ্ব-২০ দল এশিয়ান কাপ চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলেও মেয়েরা শিরোপা ধরে রেখেছেন। সে তুলনায় পুরুষ ফুটবল বড্ড ম্লান। নারী জাতীয় দল যেখানে টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পুরুষ জাতীয় দলের বেলায় তা যেন স্বপ্ন। ২০০৩ সালের পর শিরোপার ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি। সব মিলিয়ে মেয়েরা পুরুষ দলকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছেন। দেশ যখন নারী ফুটবলারদের নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে, তখন দেশের বড় দুই ক্লাব আন্তর্জাতিক আসরে নামছে আজই। দেশবিদেশে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনী ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়বে। বড় দুই দলে আবার জাতীয় দলের খেলোয়াড় ভরপুর। তাই মেয়েদের সাফল্যটা মাথায় রেখেই লড়তে হবে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের আগমন বেশি দিনের নয়। বয়সের দিক দিয়ে তাদের শিশু বললেও ভুল হবে না। ২০১৮-১৯ মৌসুমে পেশাদার ফুটবলে কিংসের অভিষেক। অথচ অল্প সময়ের মধ্যে তাদের যে অর্জন তা বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে কারওই নেই। ১৯৪৮ সালে প্রথম বিভাগ লিগ দিয়েই ঘরোয়া ফুটবলের যাত্রা। সেখানে কিংসের শুরু সত্তর বছর পর। ভাবা যায়, মাত্র সাত বছরের মাথায় টানা পাঁচবার লিগ, চারবার ফেডারেশন কাপ, তিনবার স্বাধীনতা কাপ ও একবার চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন। তারপর নারী লিগে টানা তিনবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। সব মিলিয়ে কিংসের শোকেসে সেজেছে ১৬ ট্রফি; যা ৭৭ বছরের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো দল অর্জন করতে পারেনি।
ঘরোয়া আসরে অপ্রতিরোধ্য হলেও আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্য নেই কিংসের। কিংসই একমাত্র দল যারা অভিষেকের পর থেকে টানা সাতবার এএফসি টুর্নামেন্টে খেলছে। প্রতিবারই তারা প্রথম পর্ব থেকে বিদায়। ব্যর্থতা তো আছেই, পক্ষপাতিত্ব রেফারিংয়ে পরবর্তী রাউন্ডে ওঠা সম্ভব হয়নি তাদের। আজ আরেকটি অগ্নিপরীক্ষার সামনে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস। হয় জয় না হয় বিদায়ের পুনরাবৃত্তি। কাতারের সুহেইম বিন-হামাম স্টেডিয়ামে কিংস আজ রাতে লড়বে সিরিয়ার আল-কারামাহোর বিপক্ষে। জিতলে গ্রুপ পর্বে খেলার সুযোগ। হারলে চ্যালেঞ্জ শেষ।
কাতার এমনিতেই বিশ্বে পরিচিত দেশ। তারপর আবার ২০২২ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে সুনাম কুড়িয়েছে। ৩৬ বছর পর এখানেই লিওনেল মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ উদ্ধার করেছিল। তাই কাতার বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে গাঁথা হয়ে গেছে। সেই কাতারের দোহাতেই বাংলাদেশের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা মাঠে নামছে। কিংস আজ কাতারে কী করবে? পারবে কি আগের ব্যর্থতার হিসাব বদলে দিতে? দুই দলই শক্তিশালী। দেশিবিদেশি মিলিয়ে দল সাজিয়েছে। তাই ম্যাচে কী ঘটবে বলা মুশকিল। তবে লক্ষ্য তো একটাই-জয়। আর দলটি যখন বাংলদেশের বসুন্ধরা কিংস, সে ক্ষেত্রে জয়ের আশা করাটা কাল্পনিক কিছু নয়। সত্যি বলতে কি, এবারও সেরাদের নিয়ে দল সাজিয়েছে কিংস। দুই-এক জন লোকাল খেলোয়াড় দল ছাড়লেও যাঁরা এসেছেন তাঁদের সুনাম কারও অজানা নয়। তপু বর্মন, সাইফউদ্দিন, সোহেল রানা, রাকিব, হৃদয়, ইমন, তাজউদ্দিন বা জুনিয়র সোহেল রানা ভরসার জন্য যথেষ্ট।
বিদেশিদের মধ্যে ডরিয়েলটন এক মৌসুম পর কিংসে ফিরেছেন। বাকি তিন জন টনি, সানডে ও রাফায়েল নতুন মুখ হলেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে তাঁরা খুবই পরিচিত। আর বড় চমক যাকে বলা হচ্ছে সেই প্রবাসী যুবক কিউবা মিচেলের আজই অভিষেক হচ্ছে। এমন ব্যালান্সড দল নিয়ে জয়ের আশা করা যেতেই পারে। তবে একটি বিষয়ে হয়তো কারও খটকা লাগছে। তা হলো নতুন কোচ সার্জিও ফাবিয়ার, বিদেশি ও প্রবাসীরা ঢাকায় অনুশীলন না করে সরাসরি কাতারে গেছেন। মাত্র দুই দিনে তাঁরা কি খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন? তা ছাড়া নতুন কোচও তো শিষ্যদের ঠিকমতো যাচাই করতে পারলেন না। এতে আবার হিতে বিপরীত হবে না তো?
ভালো খেলতে হলে শুধু মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন পড়ে না। দলের সাংগঠনিক ভিতও দেখতে হয়। সেখানেও কিংস এগিয়ে। বিশেষ করে সভাপতি ইমরুল হাসানের পরিশ্রমের কথা কারও অজানা নয়। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা যে কি, তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। সেই ইমরুল হাসানই বলেন, ‘এবার আমরা হিসাব বদলে দিতে চাই। যেতে চাই পরবর্তী রাউন্ডে। খেলোয়াড়দের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। কিংস বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। দেশবাসীর দোয়া চাই।’