জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিটাল স্মার্টকার্ড হবে দশ ডিজিটের। স্মার্টকার্ডের ক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদ্যমান লেমিনেটিং করা ম্যানুয়াল জাতীয় পরিচয়পত্র ১৩ ও ১৭ ডিজিটের। নাগরিকদের নম্বর মনে রাখা সহজসাধ্য হবে এ বিবেচনায় দশ ডিজিটের স্মার্টকার্ড করার বিষয়ে গত মঙ্গলবার কমিশন সভায় উপস্থিতরা সর্বসম্মত হয়েছেন। একইসঙ্গে ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটারের বাইরে ১৫ বছর বয়সীদেরও স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। এজন্য আগামী ২৫ জুলাই থেকে ১৫ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করবে ইসি।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন জানান, এ বছরেই সবার হাতে পর্যায়ক্রমে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, 'রোজার পর ১৫ বছর বয়সীদের ভোটার নিবন্ধনে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ১০ ডিজিটের এনআইডির ইউনিক নম্বর নিয়ে একজন ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি মাত্র নম্বর বহন করেই নাগরিক সুবিধা পেতে পারবেন।'
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিট হবে ১০টি। ১০ ডিজিটের মধ্যে মূলত ৯টি ডিজিট র্যান্ডম তৈরি হবে এবং শেষের ১টি ডিজিট 'চেকসাম' হিসাবে ব্যবহূত হবে। কোনো এনআইডি নম্বরের প্রথমে জিরো থাকবে না। একই ডিজিট চার বা ততোধিকবার থাকতে পারবে না। ৩টি একই ডিজিট পরপর একবারের বেশি ব্যবহার করা হবে না। ক্রমানুসারে কোনো এনআইডি তৈরি হবে না। স্বামী-স্ত্রীর নাম উল্লেখ থাকলেও উন্নত মানের ডিজিটাল কার্ডের (স্মার্ট কার্ড) উপরের অংশে স্বামী-স্ত্রীর নাম থাকছে না। তবে কার্ডের মাইক্রোচিপসে ভোটারের এই তথ্য দেয়া থাকবে। কারণ স্বামী বা স্ত্রী পরিবর্তনযোগ্য, এজন্য উন্নতমানের স্মার্ট কার্ডে একজন ভোটারের নাম, পিতা ও মাতার নাম দৃশ্যমান রাখা হবে।
১৫ বছর নাকি ১৮ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা নিয়ে এতোদিন নির্বাচন কমিশনাররা দ্বিবিভক্ত ছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবারের কমিশন সভায় বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে কোন বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়-সে সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। তাতে অনেক দেশে ১৮ বছরের নিচের বয়সীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার তথ্য উঠে আসে। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশনারদের সবাই ১৫ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
ইতোমধ্যে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফরাসি কোম্পানি অবারথু টেকনোলজির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি স্বাক্ষরও হয়েছে। কোম্পানিটি ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণ করবে। ৭৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের এই চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে পর্যায়ক্রমে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে চায় ইসি। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করার জন্য ৫টি মেশিনও ক্রয় করে আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশিত থাকবে।
এছাড়া স্মার্টকার্ডের মধ্যে যে মাইক্রোচিপ দেয়া থাকবে তাতে একজন নাগরিকের সব তথ্য পাওয়া যাবে। ২৫টি কাজে ব্যবহার করা যাবে স্মার্টকার্ড। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ২৫টি কাজে স্মার্টকার্ড ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সরকারি সব অনলাইন সুবিধা, টিআইএন প্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, সম্পত্তি কেনাবেচা, ব্যাংক হিসাব খোলা, ব্যাংক ঋণ, সরকারি ভাতা উত্তোলন, সহায়তা প্রাপ্তি, বিআইএন, শেয়ার-বিও একাউন্ট, ট্রেড লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বীমা স্কিম, বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, ই-পাসপোর্ট, ই-গভর্নেন্স, গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ, মোবাইল সংযোগ, হেলথ কার্ড, ই ক্যাশ, ব্যাংক লেনদেন ও শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজে ব্যবহার করা হবে স্মার্টকার্ড।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ জুন ২০১৫/শরীফ