নির্বিঘ্নে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ করতে পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিপিসি। সম্প্রতি এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে তেল পরিবহনের জন্য এটিই হবে প্রথম পাইপলাইন। চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে তেল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। প্রায় ৯০ শতাংশ তেল পরিবহন হয় নৌপথে।
দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতার কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে চাহিদার বিপরীতে নদীপথে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হবে না। এ ছাড়া নদীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই নাব্যতার সংকট দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতাও অনেক সময় পরিবহনে সমস্যা তৈরি করে। পাইপলাইনে তেল পরিবহন করা গেলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ব্যবহার করা হয় ২৩ লাখ টন যা মোট ব্যবহারের ৪২ শতাংশ।
বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। এতে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে পরিবহনের সময় বেশ কিছু তেলের অপচয়ও (ট্রানজিট লস) হয়। এ ছাড়া ট্যাংকার দুর্ঘটনায় নদী, খালসহ পরিবেশদূষণের ঝুঁকিও থাকে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য পাইপলাইন করলে খরচ, সময়, অপচয় ও ঝুঁকি কমবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, 'পাইপলাইন প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য সময় ও খরচ বাঁচানো। পাইপলাইনটি তৈরি করা হলে খুব দ্রুত তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। সব ধরনের খরচও কমবে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইন করার আগ্রহ রয়েছে আমাদের। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডিজ (সম্ভাব্যতা যাচাই) করা হলে বোঝা যাবে কোন রুটে পাইপলাইন তৈরি করা সম্ভব।'
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা এর আগেও একবার হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু জমির অপ্রতুলতাসহ নানা জটিলতায় সেটি আর এগোয়নি। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের তেল নেওয়ার জন্য আরেকটি পাইপলাইন তৈরিরও নির্দেশনা দেন তিনি।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিপিসির অর্থায়নে শিগগিরই পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে মূল প্রকল্পের অর্থায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সম্ভাব্যতা যাচাই হলে তেল পরিবহনের রুট নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ অথবা চট্টগ্রাম থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া পর্যন্ত এ পাইপলাইন স্থাপনের সম্ভাবনা আছে। পাইপলাইন স্থাপন ছাড়াও তেল খালাসের স্থাপনা তৈরি করা হবে।
পাইপলাইনে তেল সরবরাহের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষার মধ্যে উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা। পাইপলাইনে দেশের ভেতরে তেল পরিবহনের জন্য এটিই প্রথম প্রকল্প। এর আগে পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আনার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিপিসি।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ জুলাই ২০১৫/শরীফ