শুধু এলইডি বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমেই বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। কিন্তু সরকারের শুল্ক নীতির কারণেই এ সেক্টরটি বিকাশ লাভ করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়কে ততটা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে একটা এলইডি বাল্বের দাম এখনও দুইশ' টাকার বেশি। অথচ, একটা সনাতনি ১০০ ওয়াটের ইনসেনডিসেন্ট বাল্ব যে আলো দেয়, সেই আলোর জায়গা পূরণ করতে পারে মাত্র ৩ ওয়াটের একটি এলইডি বাল্ব।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি (লাইট ইমেটিং ডায়োড) বাল্ব তৈরির প্রধান উপকরণ এলইডি চিপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় আটটি উপকরণ। উপকরণগুলো হচ্ছে- লিড ফ্রিম, ফসপর, ক্যারিয়ার টেপ, প্লাস্টিক রীল, কভার টেপ, গোল্ড ওয়্যার, ডাই এ্যাটাচ মেটেরিয়াল বা এ্যাডহেসিভ এবং রেসিন। সম্পূর্ণ তৈরি এলইডি চিপ আমদানি করতে ৩০ দশমিক ৭৯ শতাংশ কর দিতে হয়। আর এই চিপ দেশেই উৎপাদন করতে যে আট ধরনের কাঁচামাল লাগে সেগুলো আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় ৩৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে ১৩০ দশমিক ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। এই উৎপাদনবিমুখ শুল্ক বৈষম্যই দেশে এলইডি চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক উদ্যোক্তার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গড়ে উঠছে না এলইডি চিপ তৈরির কারখানা। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে হাই-টেক শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
উদ্যোক্তারা জানান, দেশে এলইডি চিপ তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে যে পরিমাণ কর দিতে হয়, তার চেয়ে অনেক কম কর দিতে হয় সম্পূর্ণ তৈরি চিপ আমদানিতে। ফলে, উদ্যোক্তারা দেশে এলইডি চিপ তৈরির পরিবর্তে এটি আমদানি করেই প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এ ধরনের হাই-টেক কারখানা স্থাপনে দেশীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকলেও কাঁচামাল আমদানিতে বৈষম্যমূলক শুল্ক কাঠামো এ খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। এছাড়া এলইডি চিপ আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এলইডি প্রযুক্তির যতো পণ্য রয়েছে যেমন টিভি, ফ্রিজের লাইট, মোবাইল, ট্যাব এবং কম্পিউটার মনিটরের প্রধান কাঁচামাল হলো এলইডি চিপ। কিন্তু শুল্ক বৈষম্যের কারনে আমদানিকৃত এলইডি চিপ দিয়ে তৈরি পণ্যের তুলনায় দেশে তৈরি চিপ দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ইতোপূর্বে যেসব শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সরকার শুল্ক ও অন্যান্য নীতিগত সুবিধা দিয়েছে, সেসব খাত দ্রুত উঠে এসেছে। ফলে এতে বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব হচ্ছে। গার্মেন্টস, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ওষুধ, রেফ্রিজারেটর শিল্প এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতে এলইডি চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সহযোগিতা দিয়েছিল সরকার। ফলে, উচ্চ প্রযুক্তির এলইডি পণ্য উৎপাদনে ভারত এখন অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও হাই-টেক শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় শুল্ক ও নীতি সহায়তা প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ