পাকিস্তানে মায়ের কাছে আর যাওয়া হলো না রমজানের। দীর্ঘদিন বাদে বাংলাদেশে অবস্থান করা নিজের বাবার কাছেই ফেরত যাচ্ছে পাকিস্তানের বাসিন্দা মহম্মদ রমজান। বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য গতকাল বুধবারই মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে কলকাতার উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে ১৫ বছরের ছেলেটি। কলকাতা থেকে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সংলাপ'র সহায়তায় বাংলাদেশে উড়ে যাবে রমজান। 'উমিদ' নামে ভোপালের একটি শেল্টার হোমের কর্মকর্তা অর্চনা সহায় এ কথা জানান।
অর্চনা আরও জানান, ''আমরা রমজানকে পাকিস্তানে তাঁর মায়ের কাছে পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তা পারিনি। সেক্ষেত্রে তাঁর বাবার সাথে ফের মিলন করানো ছাড়া অন্য কোন পথ আমাদের কাছে খোলা ছিল না। কারণ ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যাওয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ।''
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে মা বেগম রাজিয়াকে ছেড়ে বাবা মহম্মদ কাজলের হাত ধরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে যায় ১০ বছরের রমজান। বাবার হাত ধরেই বাংলাদেশের ছোবলাকান্দি মাথাভাঙাতে গিয়ে ওঠে ছোট্ট রমজান। সেখানে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে তার বাবা। কিন্তু সৎমার হাতে অত্যাচারিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে নিজের মায়ের কাছে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রমজান। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ২০১১ সালের শেষের দিকে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য সে একাই বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রথমে ভারতে প্রবেশ করে। সেখান থেকে পাকিস্তানে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে পেরিয়ে যায় অনেকগুলো দিন। এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ভোপাল রেল স্টেশন থেকে তাঁকে আটক করে রেল পুলিশ। এরপর তাকে রাখা হয় ভোপালের 'উমিদ' নামে একটি শেল্টার হোমে। যদিও পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে রাঁচি-মুম্বাই-নিউদিল্লি সহ একাধিক জায়গায় সে অবস্থান নেয়। ধরা পড়ার পর নিজের মায়ের সাথে দেখা করার জন্য আর্জি জানায় রমজান। রমজানের আর্জি মেটাতে সে সময় একাধিক এনজিও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রালয়সহ একাধিক মন্ত্রালয়ে চিঠি চালাচালিও হয়। কিন্তু বর্ডারের 'কঠিন' কাটাতারের বেড়া রমজানকে তার মায়ের সঙ্গে মিলতে দেয়নি। পাকিস্তানে পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার কারণে অবশেষে বাংলাদেশে বাবার কাছেই পাঠানো হচ্ছে রমজানকে। কিন্তু রমজান কি থাকতে পারবে সেখানে? আর কি রমজানের ওপর হবে না কোন নির্যাতন?- এই প্রশ্নগুলোর সমাধান আজও যে হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ