ভারতে পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) চালু হলেও সেই মোতাবেক কম্পিউটার সিস্টেমে আপগ্রেডেশন না হওয়ায় থমকে গেল ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য।
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলার মাহাদিপুর স্থলবন্দরে শুল্ক দফতরের কম্পিউটারগুলোতে সেই আপগ্রেডেশন না হওয়ায় রবিবার ওই বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
রবিবার সকাল থেকেই ওই সমস্যা দেখা দেয় স্থলবন্দরটিতে, তা স্থায়ী হয় দীর্ঘ একঘন্টা। এর পর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে হাতে-কলমে (ম্যানুয়েল) কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই কাজে গতি না আসায় স্থলবন্দরের বাইরে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। আর বেলা গড়াতেই তা চরম আকার নেয়।
সূত্রের খবর মাহাদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে যায়। কিন্তু কম্পিউটার আপগ্রেডেশনের অভাবে রবিবার রফতানি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
ওয়েষ্টবেঙ্গল এক্সপোর্টাস কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র সাধারন সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা জানান ‘আটকে পড়া ট্রাকগুলিতে ফল, পিঁয়াজ, মশলা, স্টোন চিপস এবং বোল্ডার সহ অন্য জিনিস মজুদ করা রয়েছে। পরে দিকে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা হাতে লিখে এক্সপোর্ট বিল বানিয়ে দেওয়ার পর রফতানি শুরু হলেও তা খুবই ধীরগতির ছিল।
স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান ‘ঈদ উপলক্ষে শনিবার ১ জুলাই বাংলাদেশে ছুটি থাকায় এই স্থলবন্দরে বাণিজ্য বন্ধ ছিল, না হলে শনিবার থেকেই প্রচন্ড সমস্যায় পড়তে হতো’।
সূত্রের খবর মাহাদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি করে প্রতি বছরে গড়ে আনুমানিক ১৫০০ কোটি রুপির ওপরে আর্থিক লাভ করে থাকে। কিন্তু কম্পিউটার আপগ্রেডেশন না হওয়ার ফলে রবিবার একদিনেই ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি রুপির কাছাকাছি বলে বলছেন ওই কর্মকর্তা।
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি না করে জিএসটি চালু হওয়ায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেই দায়ী করেছেন মালদা ইংলিশবাজার কেন্দ্রের স্থানীয় বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ। তিনি জানান মোদি সরকারের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন’।
ব্যবসায়ীরাও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ই যদি তার কম্পিউটার সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন করতে ব্যর্থ হয় তবে লাখ লাখ ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কি আশা করা যেতে পারে?
উল্লেখ্য শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভারতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয় জিএসটি। এর উদ্যেশ্য হল সারা ভারতে ‘এক দেশ এক কর ব্যবস্থা’ চালু করা। দেশটিতে জিএসটি করের হার মোট ছয়টি। এগুলি হল ০.২৫ শতাংশ, ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশ। জিএসটি চালু হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে গেছে কেন্দ্রের নেওয়া উৎপাদন শুল্ক, পরিসেবা কর, আমদানি শুল্কের একটি অংশ, রাজ্যের পক্ষ থেকে নেওয়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর, ক্রয় হার, বিলাস কর, বিনোদন কর, প্রবেশর কর, বিজ্ঞাপন কর, সারচার্জ ইত্যাদি।
তবে জিএসটি চালু হলেও গত দুই/তিন ধরেই দেশটির নানা জায়গায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। কোথাও রেল অবরোধ, কোথাও সড়ক অবরোধ আবার কোথাও পাইকারি ও খুচরো ব্যবসা বন্ধ রেখে এই কর ব্যবস্থার প্রতিবাদ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/ ০২ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান