গাজীপুরে সোমবার সন্ধ্যায় এক পোশাক কারখানায় ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণে নয় কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও হতাহতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিস্ফোরণে ভবনের নীচ তলা ও দ্বিতীয় তলার অধিকাংশই ধসে পড়েছে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছিল। নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সোমবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার ডায়িং সেকশনে কাজ চলছিল। ঈদের ছুটির কারণে এদিন কারখানার অন্য সেকশনের উৎপাদন বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চারতলা বিশিষ্ট ওই কারখানা ভবনের নীচ তলার বয়লার হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এসময় পুরো ভবন কেঁপে উঠে এবং ভবনের নীচ তলা ও দ্বিতীয় তলার বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের প্রভাবে আশে পাশের কয়েকটি কারখানারও কাঁচ ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হন। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ি ক্লিনিক, শরিফ জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠাতে থাকে। খবর পেয়ে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
পরে শিল্প পুলিশ ও জেলা পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ হওয়ার পর কারখানার চার তলা ভবনের দু’তলা পর্যন্ত এক পাশের অংশ ধসে পড়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বয়লারের মেইনটেনেন্সের কাজ করছিল, ওই অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে শিল্প পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, বিজিএমইএ,বয়লার পরিদপ্তরের একজন করে আরও পাঁচজনসহ মোট ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিবেন। কারখানায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাজিরা নেয়া হয়। তাই পরে তা পরীক্ষা করে বলা যাবে কতজন শ্রমিক কাজ করছিল।
তিনি আরও বলেন, নিহতদের প্রতি পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে প্রদান ও আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হবে।
ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার মো. আতাউর রহমান জানান, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এস আই মো. বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সালমান শাহ (৩০) ও কামরুল (৩২) নামে দুই জনকে আনা হয়। সালমান রাত ১১টার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। দগ্ধ কামরুলকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
১৯৯২-৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানায় সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, জাপান, রাশিয়া, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও ইউকেসহ বিভিন্ন দেশের কাজ হয়ে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/০৩ জুলাই ২০১৭/এনায়েত করিম