বিবাহে যৌতুক দাবি, গ্রহণ বা প্রদানের পাশাপাশি এক্ষেত্রে সহায়তা করার অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছরের এবং কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮’ পাস হয়েছে। একইসঙ্গে আইনে যৌতুকের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করলেও ৫ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের ২২তম অধিবেশনে রবিবারের বৈঠকে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এর আগে বিলের ওপর আনীত বছাই কমিটিতে প্রেরণ, জনমত যাচাই ও সংশোধনীসমূহ কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার হবে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুসারে। এছাড়া আইনে অপরাধ জামিন অযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হলেও একইসঙ্গে আপসযোগ্য হিসেবেও বিবেচিত হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনের তিন ধারায় বলা হয়েছে, যদি বিবাহের কোন পক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিবাহের অন্য কোন পক্ষের কাছে কোন যৌতুক দাবি করেন তা হলে এই আইনের অধীনে তা অপরাধ হবে। তজ্জন্য তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে কিন্তু অনূন্য এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশে জরিমানার বিধান থাকলেও জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত ছিল না। বিলের চার ধারায় বিবাহের কোন পক্ষ যৌতুক গ্রহণ করলে বা প্রদান করলে বা এক্ষেত্রে সহায়তা করলে বা কোন চুক্তি করলে তা অপরাধ হিসেবে হিসেবে বিবেচিত হবে। উপরোক্ত একইদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলের ৫ ধারায় যৌতুক সংক্রান্ত সকল চুক্তিকে আইনের চোখে অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর থেকে সর্বনিম্ন এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলের ছয় ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অন্যকোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধানের অভিপ্রায়ে অভিযোগ করার আইনানুগ কারণ জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগের আইনে যৌতুকের মিথ্যা মামলার জন্য কোন শাস্তির বিধান ছিল না। এই আইন বলে ডুওয়ারি প্রোহিবিটেশন এ্যাক্ট ১৯৮০ রহিত করা হয়। তবে উক্ত আইনের অধীন চলমান মামলাসমূহ পরিচালনার ক্ষেত্রে আগের আইন বহাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিলের কারণ ও উদ্দেশ্য সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যৌতুক প্রথা এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এই যৌতুক প্রথা অবসানের লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের অধ্যাদেশ-এর আলোকে নতুন আইন প্রণয়নে বিলটি আনা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণীত বিল প্রণীত হয়েছে। অপরাধ বিচার আপীল ও তদন্তে কোড অব সিভিল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব